১৩ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ।৩০শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ।শুক্রবার

১৪৪ ধারার দিন শেষ, দেশের মানুষ আজ ঐক্যবদ্ধ : আমির খসরু মাহমুদ

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

১৪৪ ধারার দিন শেষ, দেশের মানুষ আজ ঐক্যবদ্ধ : আমির খসরু মাহমুদ

শেখ আবদুল্লাহ
আনোয়ারা(চট্রগ্রাম)প্রতিনিধি

বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, ১৪৪ ধারার দিন শেষ হয়ে গেছে। দফায় দফায় অনুমতি নিয়ে জনসভার দিন শেষ হয়ে গেছে। দেশের মানুষ আজ ঐক্যবন্ধ। কিছুতেই জনগণকে আটকে রাখা যাবে না। অবৈধ সরকারের কাছে খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই না। আন্দোলনের মাধ্যমে তাকে আমরাই মুক্ত করব।
বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দাবিতে গতকাল বুধবার কর্ণফুলী উপজেলার মইজ্জ্যারটেকস্থ সিডিএ মাঠে দক্ষিণ জেলা বিএনপি আয়োজিত সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই না, মুক্ত আমরা করব। কার কাছে মুক্তি চাইব? একটা অবৈধ, অনির্বাচিত, দুর্নীতিবাজ, দালাল সরকারের কাছে? খালেদা জিয়াকে মুক্ত করব আন্দোলনের মাধ্যমে। এ অবৈধ, অনির্বাচিত সরকারের কাছে খালেদা জিয়ার মুক্তি আমরা চাইতে পারি না। আগে তাদের পতন ঘটাতে হবে। পতনের মাধ্যমে দেশনেত্রীকে মুক্ত করতে হবে।
বিএনপি এখন অনেক শক্তিশালী উল্লেখ করে খসরু বলেন, গুম-খুন, হত্যা, মিথ্যা মামলার মাধ্যমে বিএনপির নেতাকর্মীরা পুড়ে পুড়ে আজ খাঁটি সোনায় পরিণত হয়েছে। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, টেক ব্যাক বাংলাদেশ। নেতাকর্মীদের বলব, বাংলাদেশকে উদ্ধার কর। বাংলাদেশের আত্মাকে মুক্ত করে দাও। যারা বাংলাদেশের আত্মাকে বিক্রি করে দিয়েছে, তাদের মূল্য দিতে হবে আগামীদিনে।
সভা-সমাবেশে নিষেধাজ্ঞার বিষয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ওমিক্রন নয়, আসল রোগ অন্য জায়গায়। রোগ হচ্ছে, সরকার পতনের দিন ঘনিয়ে এসেছে। ওমিক্রনের নাম দিয়ে ১৫/২০ দিন পতন ঠেকাতে পারবেন, না হলে বড়জোর একমাস ঠেকাতে পারবেন। পতন কিন্তু হবেই হবে। এ যে উত্তাল আন্দোলন শুরু হয়েছে, কোন শক্তি একে রুখতে পারবে না। ধানাইপানাই করে কোনো লাভ হবে না। ১৪৪ ধারায় কোনো কাজ হবে না। ১৪৪ ধারার দিন শেষ হয়ে গেছে। অনুমতি দিয়ে জনসভা করার দিনও শেষ হয়ে গেছে। এ বাঁধভাঙ্গা জোয়ার রুখার কারও কোন শক্তি নেই। ডান-বাম কিছু নেই, সমস্ত বাংলাদেশ আজ ঐকব্যদ্ধ।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলছেন, দেশে-বিদেশে নাকি সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে। আমি বলতে চাই, আসল ষড়যন্ত্র করছে আওয়ামী লীগ। তারা দেশের মানুষের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। এদেশের মানুষের ভোট কেড়ে নেওয়ার ষড়যন্ত্র করছে। বিচার বিভাগকে কুক্ষিগত করে ক্ষমতায় থাকার ষড়যন্ত্র করছে। গণমাধ্যমের গলা টিপে ধরে ক্ষমতায় থাকার ষড়যন্ত্র করছে। সরকারি কর্মকর্তাদের ব্যবহার করে দলীয়করণের মাধ্যমে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। তারা আগামী নির্বাচনে আবার ভোট চুরির ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। আলোচনার মাধ্যমে সব ভোটচোররা আজ এক জায়গায় যুক্ত হয়েছে। তারা আবার ভোটচুরির জন্য নতুন ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। এ ষড়যন্ত্র ও চুরির ভাগিদাররা, যারা অতীতেও চুরির ভাগ নিয়েছে, তারা আবার চুরির ভাগের জন্য ঘুর ঘুর করছে। তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতার মূলমন্ত্র ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ধ্বংস করেছে। তারা বাংলাদেশের আত্মাকে বিক্রি করে দিয়েছে।
ষড়যন্ত্রকারীদের ছাড় দেওয়া হবে না জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ তাদের ষড়যন্ত্রকে ধ্বংস করে দেবে। বাংলাদেশের মানুষ আজ একতাবদ্ধ হয়েছে, সেই ষড়যন্ত্রকে চুরমার করে দেবে। মানুষের যে জোয়ার শুরু হয়েছে, আগামীদিনে বাংলাদেশের মানুষ সেই ষড়যন্ত্রকারীদের ধ্বংস করে দেবে। বাংলাদেশের মানুষ নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে, যারা যারা ষড়যন্ত্রের সাথে জড়িত তাদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। যারা আমাদের সাংবিধানিক অধিকার কেড়ে নিয়ে সভা-সমাবেশে বাধা দিচ্ছে, তাদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
একদিন সব হিসাব দিতে হবে জানিয়ে আমির খসরু বলেন, আওয়ামী লীগ যে মধ্যরাতে ভোটচুরি করে ক্ষমতা দখল করেছে সেটা সবাই জেনে গেছে। গুম, খুন, মিথ্যা মামলার মাধ্যমে তারা যে ক্ষমতায় টিকে আছে, সেটা বিশ্বব্যাপী দিনের আলোর মতো পরিষ্কার হয়ে গেছে। আমেরিকায় কংগ্রেস-সিনেটে দুই দলের সদস্যরা, বিশ্বের মানবাধিকার সংগঠনগুলো, আমেরিকার মানবাধিকার গ্রæপগুলো, সবাই একসঙ্গে মার্কিন সরকারকে বলেছে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য। তারা বাংলাদেশে যে আকাম-কুকাম করছে, সেটা ঢাকার জন্য বিদেশে লবিস্ট নিয়োগ করেছে। বাংলাদেশের মানুষকে তারা গুম করছে, খুন করছে, হত্যা করছে। আবার তাদের ট্যাক্সের টাকা দিয়ে বিদেশে লবিস্ট নিয়োগ করেছে। এর হিসাব তাদের একদিন দিতে হবে।
প্রশাসনকে আওয়ামী লীগ নেতাদের তালিকা তৈরি করার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, একটা পরামর্শ দিই, আওয়ামী লীগের যে গুটিকয়েক সমর্থক আছেন, আপনারা তাদের তালিকা করুন। আর বাদবাকি সব বিএনপি। এত কষ্ট করার তো দরকার নেই। আওয়ামী লীগে এখন কোনো রাজনীতিবিদ নেই। লুটপাটে যারা জড়িত, তারা ছাড়া আওয়ামী লীগে এখন আর কেউ নেই। এর বাইরে সবাই এখন বিএনপি।
প্রধান বক্তার বক্তব্যে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা জয়নাল আবেদীন ফারুক বলেন, বীর চট্টলার মানুষ বিগত ১২টি বছর সরকারের অত্যাচার নির্যাতন সহ্য করে যাচ্ছেন। কিন্তু এই ১২ বছরে বিএনপি’র একটি লোকও অন্যদলে যান নাই। আজকে গুরুতর অসুস্থ বেগম খালেদা জিয়াকে ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে বন্দি করে রেখেছে। প্রশাসন দিয়ে বিএনপিকে ধ্বংস করার পরিকল্পনা করেছে কিন্তু পারেন নাই। পেরেছন শুধু নেতাকর্মীদের সপ্তাহের পাঁচটা দিন কোর্টের বারান্দায় হাজিরা দিতে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম বলেন, বিএনপির আজকের এ সমাবেশ প্রমাণ করেছে, চট্টগ্রামবাসী শেখ হাসিনার সরকারকে এক মুহুর্তও ক্ষমতায় দেখতে চায় না। এ সমাবেশের দাবি, বেগম খালেদা জিয়াকে অবিলম্বে মুক্তি দিয়ে বিদেশে চিকিৎসার ব্যবস্থা করুন। যদি বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য মুক্তি দেওয়া না হয়, তাহলে চট্টগ্রামকে অচল করে দেওয়া হবে। আমরা ঘরে বসে থাকবো না।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে যুবদল কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সাইফুল আলম নীরব বলেন, আওয়ামী লীগের নেতারা চিকিৎসার সুযোগ পাচ্ছেন আর বেগম খালেদা জিয়াকে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত করছে। আমরা খালেদা জিয়ার চিকিৎসার অধিকার চাচ্ছি। কিন্তু সরকার দিচ্ছে না। তাই অধিকার আদায় করে নিতে হবে।
দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক আবু সুফিয়ানের সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব মোস্তাক আহমেদ খান ও আহবায়ক কমিটির সদস্য এসএম মামুন মিয়ার যৌথ পরিচালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী জাফরুল ইসলাম চৌধুরী, কেন্দ্রীয় বিএনপির শ্রম সম্পাদক এএম নাজিম উদ্দীন, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি’র সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক জালাল উদ্দিন মজুমদার, হারুনুর রশীদ ভিপি, কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য ও সাবেক এমপি গাজী শাহজাহান জুয়েল, সরওয়ার জামান নিজাম, কেন্দ্রীয় যুবদলের সভাপতি ইউসুফ বিন জলিল কালু, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য এনামুল হক এনাম, মোশারফ হোসেন, এড. ইফতেখার হোসেন চৌধুরী মহসিন,মোস্তাফিজ রহমান, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ইয়াসিন আলী, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সহ সভাপতি আশরাফুল আলম লিংকন, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ফারুক আহমেদ সাব্বির, দক্ষিণ জেলা যুবদলের সভাপতি মো. শাহজাহান, সাধারণ সম্পাদক মো. আজগর, স্বেচ্ছাসেবক দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শফিকুল ইসলাম রাহি, সাধারণ সম্পাদক মন্জুর আলম তালুকদার, দক্ষিণ ছাত্রদলের সভাপতি শহীদুল আলম শহীদ, সাধারণ সম্পাদক মো. মহসিন, বাশখালী উপজেলা বিএনপির আহবায়ক মাস্টার মো. লোকমান, কর্ণফুলী উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব হাজী মো. উছমান প্রমুখ।

এই পোস্টটি আপনার সামাজিক মিডিয়াতে সেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রনজিৎ বর্মন শ্যামনগর(সাতক্ষীরা)প্রতিনিধি ঃ

সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলায় নীলাকাশ টুডের সম্পাদক মোঃ নুরুজ্জামানের সড়ক দূর্ঘটনায় মর্মান্তিকভাবে মৃত্যু হয়েছে।

শুক্রবার (২৬ জুলাই) রাত সাড়ে দশটায় শ্যামনগর উপজেলা সদরের নিকবর্তী গোপালপুর সড়কে কুলখালী নামক স্থানে দূর্ঘটনাটি ঘটে।

নিহতের পরিবার ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায় রাত সাড়ে দশটায় নিজ বাইসাইকেল যোগে নিজ বাড়ী উপজেলার নুরনগর ইউপির নুরনগর গ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা হন। এ সময় গোপালপুর মুক্তিযোদ্ধা সড়কে কুলখালী নামকস্থানে নির্মানাধীন বক্স কালভার্টের গর্তে সাইকেল সহ পড়ে যান। নির্মানাধীন বক্স কালভার্টের বাহিরে বের হওয়া লোহার রড তার মাথায় ছিদ্র হয়ে ঢুকে যেয়ে এক পাশ থেকে অপরপাশে বের হয়ে যায় পর স্থানীয়রা শ্যামনগর উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাঃ আনিছুর রহমান মৃত বলে ঘোষণা করেন।

শ্যামনগর প্রেসকাবের সাবেক সভাপতি আকবর কবীর বলেন কিছুদিন পূর্বে এই বক্স কালভার্ট তৈরী করতে যেয়ে একই সড়কে মোমিন মল্লিক নামে এক শ্রমিক মারা যান। তিনি আরও বলেন  নির্মানাধীন বক্স কালভার্টের  ঠিকাদার হিসাবে কাজ করছেন এস এম আবুল বাসার।

নীলাকাশ টুডের সম্পাদক মোঃ নুরুজ্জামানের মৃত্যুতে গভীর ভাবে শোক প্রকাশ করেছেন সাতক্ষীরা-৪ আসনের এমপি এস এম আতাউল হক দোলন, শ্যামনগর উপজেলা প্রেসকাবের আহবায়ক শেখ আফজালুর রহমান সহ সকল সাংবাদিকবৃন্দ, সুন্দরবন প্রেসকাবের সাংবাদিকবৃন্দ প্রমুখ।

ছবি- নিহত নীলাকাশ টুডের সম্পাদক মোঃ নুরুজ্জামান।

রনজিৎ বর্মন
তাং-২৭.৭.২৪

নীলাকাশ টুডের সম্পাদক নুরুজ্জামান সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত।