এম এ রশীদ সিলেট থেকেঃঃ
সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেছেন, বর্তমান স্থানেই হাসান মার্কেট রেখেই বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হবে। হাসান মার্কেট সিসিকের সম্পত্তি। এই মার্কেটের উন্নয়নে সিসিক অতীতেও কাজ করেছে, আগামীতেও সব ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। তিনি দ্বি-পাক্ষিক চুক্তির আলোকে হাসান মার্কেটের উন্নয়ন কর্মকান্ড বাস্তবায়ন হবে বলে ব্যবসায়ীদের আশ্বাস্থ করেন।
সোমবার (২৫ অক্টোবর) দুপুরে হাসান মার্কেট দোকান মালিক ও ব্যবসায়ী সমিতি নেতৃবৃন্দের সাথে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
এ সময় বক্তব্য রাখেন হাসান মার্কেট দোকান মালিক ও ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. রইছ আলী, সহ সভাপতি আহমদ আফজল সিরাজ পাভেল ও আক্তার হোসেন সুহেল, সাধারণ সম্পাদক নিয়াজ মো. আজিজুল করিম, কোষাধ্যক্ষ বেলাল আহমদ।
এসময় উপস্থিত ছিলেন- সমিতির প্রচার সম্পাদক সৈয়দ মুরাদ হোসেন রাজিব, সদস্য দুলাল মৃধা, শরীফ হোসেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী লোকমান হোসেন কিমরান, ময়নুল ইসলাম চৌধুরী, শাহাব উদ্দিন, জাবেদ আহমদ, কিশোর চৌধুরী, সেলিম আহমদ, আমিনুর রহমান খছরু, সাদ্দাম হোসেন, মো. ছাদেক, মিনহাজ আলম খান মিনু, শের আলী, মউনুল ইসলাম, জহির আহমদ, আনোয়ার হোসেন, নুরুল ইসরাক মাহির, নুরুল ইসলাম প্রমুখ।
এ সময় নেতৃবৃন্দ মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর হাতে হাসান মার্কেটের সার্বিক বিষয়বৃত্তান্ত অবহিতকরণ ও সার্বিক উন্নয়ন প্রসঙ্গে একটি স্মারকলিপি পেশ করেন।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মালিকানাধীন হাসান মার্কেট সিলেট শহরের প্রাণকেন্দ্র বন্দরবাজার জনগুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক এলাকা অবস্থিত। ১৯৫৯ সালে হাসান মার্কেট নির্মাণ করা হয়। মার্কেট দোকানসমূহ ২০ বছর মেয়াদ পুণঃনবায়ন শর্তে আরও ২০ বছর মোট ৪০ বছরের জন্য তৎকালীন সিলেট জেলা ডেপুটি কমিশনার লীজ বন্দোবস্তের মাধ্যমে দোকান কোঠা বরাদ্দ দেন। বিগত ১৯৯৯ সালে লীজের মেয়াদ উত্তীর্ণ হলে সিলেট পৌরসভার চেয়ারম্যান মরহুম বদর উদ্দিন আহমদ কামরান ইজারা চুক্তির মাধ্যমে ১৫ বছরের জন্য মার্কেটের লীজ নবায়ন করেন। পরবর্তীতে ২০১৪ সালে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের পক্ষে নির্বাহী কর্মকর্তা এনামুল হাবিব ১৫ বছরের জন্য ২০২৯ সাল পর্যন্ত দোকান কোঠা লীজ নবায়ন করেন।
স্মারকলিপিতে আর বলা হয়, হাসান মার্কেট উন্নয়কল্পে সিলেট পৌরসভা পৃথক বিগত দিনের প্রস্তাব অংশ বিশেষ ১৯৮৬ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন সিলেট পৌরসভার চেয়ারম্যান মরহুম আফম কামাল অ্যাডভোকেট উপস্থিতিতে ব্যবসায়ী প্রতিনিধিবৃন্দ এবং পৌর কর্তৃপক্ষের মধ্যে উন্নয়ন সংক্রান্ত সভা অনুষ্ঠিত হয়। মার্কেট উন্নয়ন বিষয়ে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। তারই ধারাবাহিকতায় হাসান মার্কেট ভেঙ্গে চারতলা ভিত্তিযুক্ত মার্কেট নির্মাণ উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হলে হাসান মার্কেট দোকান মালিক ও ব্যবসায়ী সমিতির সাথে ধারাবাহিকভাবে ১৯৯২ সালের ২৬ জানুয়ারি ও ১৯৯২ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ও একই সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত বিশেষ সভা ও ১৯৯২ সালের ৫ মার্চের মাসিক সাধারণ সভায় সংশোধিত তৎসংক্রান্ত বিষয়, শর্তাবলী বিস্তারিতভাবে আলোচনা ও পর্যালোচনা করা হয়। বন্দরবাজারস্থ হাসান মার্কেটের স্থলে নতুনভাবে চারতলা ভিত্তিযুক্ত মার্কেট নির্মাণের সর্বসম্মতি প্রস্তাব সভায় আলোচনাক্রমে অনুমোদন করা হয়।
স্মারকলিপিতে বলা হয় সিলেট পৌরসভা থাকালীন সময়ে ১৯৯৯ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত হাসান মার্কেট প্রায় ২ কোটি টাকা সিটি কর্পোরেশনের তহবিলে জমা দিয়েছে হাসান মার্কেট দোকান মালিক ও ব্যবসায়ী সমিতি। যার বর্তমানে লাভসহ ২০ কোটি টাকার সমপরিমাণ হবে।
সিসিক ও হাসান মার্কেটের মধ্যে স্বাক্ষরিত দ্বি-পাক্ষিক সমঝোতা স্মারকের আলোকে মার্কেট উন্নয়নের বিষয়ে মেয়রের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, সিলেট নগরীর বন্দরবাজার এলাকার হাসান মার্কেট ও লালদিঘী সিটি সুপার মার্কেটের জায়গায় গড়ে তোলা হবে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কমপ্লেক্স’। প্রায় ১৫ একর জায়গা জুড়ে হবে এই আধুনিক স্থাপনা। যেখানে ‘বঙ্গবন্ধু চত্বরে’ তার স্মৃতি ছাড়াও ভাষা আন্দোলন, ছয় দফা আন্দোলন, গণঅভ্যুত্থান, মুক্তিযুদ্ধসহ বাংলাদেশের স্বাধিকার আন্দোলনের প্রতীকী উপস্থাপনা থাকবে।
এছাড়া ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানে তর্জনী উঁচিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছিলেন, তার সেই তর্জনীর আদলে ‘বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্সে’ একটি ভাস্কর্য নির্মাণ করা হবে। এখানে ‘বঙ্গবন্ধু প্লাজা’য় থাকবে মুক্তিযুদ্ধের দালিলিক স্মারক সংগ্রহশালা, সিনেপ্লেক্স, অডিটোরিয়াম, এক হাজার আসনের কনভেনশন হল। থাকবে শেখ রাসেলের নামে পার্কও। চলতি বছরের ২৯ জানুয়ারি সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) উদ্যোগে ‘উন্নয়ন অগ্রযাত্রা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে সিলেটে ‘বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্স’ নির্মাণের তথ্য প্রথমবারের মতো উপস্থাপন করা হয়। ইতোমধ্যে এই কমপ্লেক্সের নকশাও চূড়ান্ত হয়ে গেছে। ট্রায়াঙ্গল কনসালট্যান্ট নামের একটি প্রতিষ্ঠান নকশা করেছে। এর সঙ্গে স্থপতি শাকুর মজিদ জড়িত।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে ২৫ তলা বিশিষ্ট কমপ্লেক্সটি প্রায় ১৫শ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হবে। নকশা প্রস্তুত ও প্রকল্প প্রস্তাবনা চূড়ান্ত করে বিষয়টি অনুমোদনের জন্য সিলেট-১ আসনের সাংসদ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন চলতি বছরের জুনে ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট’ বরাবরে আবেদন করেন। এরপর সেখান থেকে মেলে অনুমতি। এই ট্রাস্টের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
Leave a Reply