এম এ রশীদ সিলেট থেকেঃঃ
সিলেট শহরতলীর শাহপরান (রহঃ) থানাধীন ৫নং টুলটিকর ইউনিয়ন পরিষদের অন্তর্ভুক্ত ৮নং ওয়ার্ডের বালুচর জোনাকি এলাকায় চলছে প্রকাশ্য দিবালোকে টিলা কাটার হিড়িক। এ যেনও দেখার কেউ নেই!
প্রকাশ্য দিবালোকে এভাবেই টিলা কেটে নিচ্ছে স্থানীয় এলাকার একটি প্রভাবশালী টিলা খেকো চক্র। দিনে মানুষ নেই, সুনসান। কিন্তু অন্ধকার নামলেই পাল্টে যায় পূরো দৃশ্যপট। টিলার গায়ে, ওপরে, নিচে মানুষের পদচারণা। মানুষের হাকঁডাক, টিলার গায়ে অনবরত শাবল-বেলাচার আঘাত, ট্রাকে করে মাটি নিয়ে যাওয়া সব মিলিয়ে রাজ্যের ব্যস্ততা।
সিলেটের সম্প্রতি ভূমিকম্প দফায় দফায় হচ্ছে। আতঙ্কে রয়েছেন শহরতলীর বাসিন্দারা। কোন কিছুতেই বন্ধ হচ্ছে না মাটি খেকোদের তান্ডব লীলা!
উত্তর বালুচর জোনাকি এলাকার মাদপের টিলা (বর্তমানে লেচু বাগান নামে পরিচিত), বালুচর জোনাকি বাদাম কোনার টিলা ও চন্দনের টিলাতে কিছুতেই বন্ধ হচ্ছে না টিলা কাটার মহোৎসব। দিন দিন বেপরোয়া হারে বাড়ছে টিলা কাটার মহোৎসব। মিডিয়ার তালিকায় যুক্ত হচ্ছে মাটি খেকোদের নিত্য নতুন নাম।
উল্লেখ্য, মাদপের টিলা (বর্তমানে লেচু বাগান নামে পরিচিত), বালুচর জোনাকি বাদাম কোনার টিলা ও চন্দনের টিলা গুলো কাটছে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মাটি খেকো চক্র। এই চক্রের বিরুদ্ধে কোন আইনি ব্যবস্থা না নেওয়ায় ইদানিং তারা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
প্রথম প্রথম কিছুটা রাখডাক থাকলেও এখন পূরো এলাকায় বিষয়টি ‘ওপেন সিক্রেট’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু টিলা কাটার চক্রটি শক্তিশালী হওয়ায় ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস পাচ্ছে না। কেউ কেউ তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে সম্মুখীন হতে হয়েছে মিথ্যা বানোয়াট মামলা ও হামলার।
সরেজমিনে স্থানীয় একাধিক সুত্রে জানা গেছে, ৫ নং টুলটিকর ইউনিয়ন পরিষদের অন্তর্ভুক্ত ৮নং ওয়ার্ডের বালুচর জোনাকি আবাসিক এলাকার এলাকার বর্নিত টিলাগুলো অধিকাংশ জায়গাতে সরকারি ডিসপুট রয়েছে। বালুচর জোনাকি আবাসিক এলাকার মরহুম শাহেব আলীর পুত্র এলাকার চিহ্নিত মাটি খেকো ও পুলিশের দালাল নামে ব্যাপক পরিচিত জালাল উদ্দীন উরফে দালাল জালালের নেতৃত্বে ওই টিলাগুলো কাটা হচ্ছে। শুধু তাই নয় গত ৩১ আগস্ট ২০২১ ইং তারিখে সিলেট বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তর বাদী হয়ে শাহপরান (রহঃ) থানায় সিলেট বালুচর এলাকার চিহ্নিত ৯ জন ভূমি খেকোসহ আরো অজ্ঞাতনামা ১০-১২ জন ভূমি খেকোকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। যাহার শাহপরান (রহঃ) থানার মামলা নং- ২৮। কিন্তু অদৃশ্য পেশীশক্তির কারণে ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায় বালুর এলাকার পাহাড় ও টিলা কাটার মূলহোতা জালাল উদ্দীন উরফে দালাল জালাল। আর সে বর্ণিত টিলা গুলো কাটার ঠিকাদারি নিয়ে এলাকার চিহ্নিত মাটি খেকোদের দিয়ে টিলা গুলো কর্তন করাচ্ছে। তারা বর্তমানে ৩ থেকে ৪টি টিলা কন্টাক্টে রেখে টিলা কাটছে ও প্রতি টিলা কাটার জন্য হাদিয়া বাবদ দেড় থেকে ২ লক্ষ্য টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এই চক্রটি বিগত কিছু দিন থেকে বেপরোয়া ভাবে ওই টিলাগুলোর মাটি কেটে নিচ্ছে। তাদের দিন ও রাত নেই, তারা প্রকাশ্য টিলাগুলো কেটে বিভিন্ন স্থানে মাটি বিক্রি করছে। কিন্তু রহস্য জনক কারণে এই চক্রের বিরুদ্ধে কোন আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না। যার ফলে প্রতিদিনই তারা বিভিন্ন স্থানে অনায়াসে টিলা কাটছে।
সম্প্রতি ইতিমধ্যে জালাল উদ্দীন উরফে দালাল জালালসহ কয়েকজন মাটি খেকোরা মিলে রাতে আদারে টিলার মাটি কেটে বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাওয়ার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলেও অদৃশ্য কারণে স্থানীয় থানা পুলিশ ও সিলেট বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তর বালুচর এলাকার টিলা কাটার গডফাদার জালাল উদ্দীন উরফে দালাল জালালের বিরুদ্ধে কোন আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন না।
এখানেই থেমে নয়, স্থানীয় কয়েকজন রড মিস্ত্রি ও টমটম ডাইবার থেকে কয়েক মাসের ব্যবধানে রুপ বদলে নামে মাত্র সাংবাদিক সাইনবোর্ড লাগানো কয়েকজন নামধারী কথিত সাংবাদিকরা মাটি খেকো জালাল উদ্দীন উরফে দালাল জালালকে শেল্টার দিয়ে তারা তাদের পকেট ভারী করছে। আর ওই কথিত সাংবাদিকরাই এই মাটি খেকো চক্রকে টিলা কাটার সু-ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন প্রশাসনের বিভিন্ন সেক্টরকে ম্যানেজ করে বলেও অভিযোগ প্রকাশ। তাদের সাথে অর্থনৈতিক লেনদেনের কারণে এই চক্রটি আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
তবে সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে- এই জালাল উদ্দীন উরফে দালাল জালালকে দেখা যায় আবার টিলা কাটার বিরুদ্ধে বিভিন্ন কথিত ফেসবুক লাইভ পেইজে টিলা কাটার বিরুদ্ধে প্রশাসনসহ স্থানীয় কিছু গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গের বিরুদ্ধে অযথা অপবাদ রটাতে। কিন্তু এলাকায় টিলা কাটার মতো পরিবেশ বিধ্বংসী কাজ সে নিজেই করছে। এক কথা বলা যায় “চোরের মুখে রাম রাম”।
সিলেটের পরিবেশবিদরা এমনটাই দাবি করছেন টিলা গুলো কাটার কারণে আজ বার বার সিলেটে ভূমিকম্প হচ্ছে। এতে টিলা কাটা থেকে বিরত থাকার অনুরোধ করছেন তারা। এই টিলা গুলো হয়তো একদিন আমাদের সিলেটবাসীকে রক্ষা করবে।
এদিকে প্রকাশ্য দিবালোকে টিলা কাটার মহোৎসব চললেও অদৃশ্য কারণে সিলেট বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তর ও স্থানীয় থানা পুলিশের নীরব ভূমিকায় জনসাধারণ ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
উল্লেখ্য, পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫-এর ৬ (খ) ধারা অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সরকারি বা আধা সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন বা দখলাধীন বা ব্যক্তি মালিকানাধীন পাহাড় ও টিলা কর্তন বা মোচন করতে পারবে না। তবে অপরিহার্য জাতীয় স্বার্থে প্রয়োজনে অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নিয়ে পাহাড় বা টিলা কাটা যেতে পারে। আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ড ও ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে।
তাই স্থানীয় সচেতন মহল এই টিলা খেকোদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তার নিকট আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।
Leave a Reply