২রা অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ।১৭ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।বুধবার

সিলেটে কর্তৃপক্ষের নাকের ডগায় জালাল’র নেতৃত্বে চলছে টিলা কাটার হিড়িক! 

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

 

এম এ রশীদ সিলেট থেকেঃঃ

 

সিলেট শহরতলীর শাহপরান (রহঃ) থানাধীন ৫নং টুলটিকর ইউনিয়ন পরিষদের অন্তর্ভুক্ত ৮নং ওয়ার্ডের বালুচর জোনাকি এলাকায় চলছে প্রকাশ্য দিবালোকে টিলা কাটার হিড়িক। এ যেনও দেখার কেউ নেই!

 

প্রকাশ্য দিবালোকে এভাবেই টিলা কেটে নিচ্ছে স্থানীয় এলাকার একটি প্রভাবশালী টিলা খেকো চক্র। দিনে মানুষ নেই, সুনসান। কিন্তু অন্ধকার নামলেই পাল্টে যায় পূরো দৃশ্যপট। টিলার গায়ে, ওপরে, নিচে মানুষের পদচারণা। মানুষের হাকঁডাক, টিলার গায়ে অনবরত শাবল-বেলাচার আঘাত, ট্রাকে করে মাটি নিয়ে যাওয়া সব মিলিয়ে রাজ্যের ব্যস্ততা।

 

সিলেটের সম্প্রতি ভূমিকম্প দফায় দফায় হচ্ছে। আতঙ্কে রয়েছেন শহরতলীর বাসিন্দারা। কোন কিছুতেই বন্ধ হচ্ছে না মাটি খেকোদের তান্ডব লীলা!

 

উত্তর বালুচর জোনাকি এলাকার মাদপের টিলা (বর্তমানে লেচু বাগান নামে পরিচিত), বালুচর জোনাকি বাদাম কোনার টিলা ও চন্দনের টিলাতে কিছুতেই বন্ধ হচ্ছে না টিলা কাটার মহোৎসব। দিন দিন বেপরোয়া হারে বাড়ছে টিলা কাটার মহোৎসব। মিডিয়ার তালিকায় যুক্ত হচ্ছে মাটি খেকোদের নিত্য নতুন নাম।

 

উল্লেখ্য, মাদপের টিলা (বর্তমানে লেচু বাগান নামে পরিচিত), বালুচর জোনাকি বাদাম কোনার টিলা ও চন্দনের টিলা গুলো কাটছে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মাটি খেকো চক্র। এই চক্রের বিরুদ্ধে কোন আইনি ব্যবস্থা না নেওয়ায় ইদানিং তারা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।

 

প্রথম প্রথম কিছুটা রাখডাক থাকলেও এখন পূরো এলাকায় বিষয়টি ‘ওপেন সিক্রেট’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু টিলা কাটার চক্রটি শক্তিশালী হওয়ায় ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস পাচ্ছে না। কেউ কেউ তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে সম্মুখীন হতে হয়েছে মিথ্যা বানোয়াট মামলা ও হামলার।

 

সরেজমিনে স্থানীয় একাধিক সুত্রে জানা গেছে, ৫ নং টুলটিকর ইউনিয়ন পরিষদের অন্তর্ভুক্ত ৮নং ওয়ার্ডের বালুচর জোনাকি আবাসিক এলাকার এলাকার বর্নিত টিলাগুলো অধিকাংশ জায়গাতে সরকারি ডিসপুট রয়েছে। বালুচর জোনাকি আবাসিক এলাকার মরহুম শাহেব আলীর পুত্র এলাকার চিহ্নিত মাটি খেকো ও পুলিশের দালাল নামে ব্যাপক পরিচিত জালাল উদ্দীন উরফে দালাল জালালের নেতৃত্বে ওই টিলাগুলো কাটা হচ্ছে। শুধু তাই নয় গত ৩১ আগস্ট ২০২১ ইং তারিখে সিলেট বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তর বাদী হয়ে শাহপরান (রহঃ) থানায় সিলেট বালুচর এলাকার চিহ্নিত ৯ জন ভূমি খেকোসহ আরো অজ্ঞাতনামা ১০-১২ জন ভূমি খেকোকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। যাহার শাহপরান (রহঃ) থানার মামলা নং- ২৮। কিন্তু অদৃশ্য পেশীশক্তির কারণে ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায় বালুর এলাকার পাহাড় ও টিলা কাটার মূলহোতা জালাল উদ্দীন উরফে দালাল জালাল। আর সে বর্ণিত টিলা গুলো কাটার ঠিকাদারি নিয়ে এলাকার চিহ্নিত মাটি খেকোদের দিয়ে টিলা গুলো কর্তন করাচ্ছে। তারা বর্তমানে ৩ থেকে ৪টি টিলা কন্টাক্টে রেখে টিলা কাটছে ও প্রতি টিলা কাটার জন্য হাদিয়া বাবদ দেড় থেকে ২ লক্ষ্য টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এই চক্রটি বিগত কিছু দিন থেকে বেপরোয়া ভাবে ওই টিলাগুলোর মাটি কেটে নিচ্ছে। তাদের দিন ও রাত নেই, তারা প্রকাশ্য টিলাগুলো কেটে বিভিন্ন স্থানে মাটি বিক্রি করছে। কিন্তু রহস্য জনক কারণে এই চক্রের বিরুদ্ধে কোন আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না। যার ফলে প্রতিদিনই তারা বিভিন্ন স্থানে অনায়াসে টিলা কাটছে।

 

সম্প্রতি ইতিমধ্যে জালাল উদ্দীন উরফে দালাল জালালসহ কয়েকজন মাটি খেকোরা মিলে রাতে আদারে টিলার মাটি কেটে বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাওয়ার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলেও অদৃশ্য কারণে স্থানীয় থানা পুলিশ ও সিলেট বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তর বালুচর এলাকার টিলা কাটার গডফাদার জালাল উদ্দীন উরফে দালাল জালালের বিরুদ্ধে কোন আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন না।

 

এখানেই থেমে নয়, স্থানীয় কয়েকজন রড মিস্ত্রি ও টমটম ডাইবার থেকে কয়েক মাসের ব্যবধানে রুপ বদলে নামে মাত্র সাংবাদিক সাইনবোর্ড লাগানো কয়েকজন নামধারী কথিত সাংবাদিকরা মাটি খেকো জালাল উদ্দীন উরফে দালাল জালালকে শেল্টার দিয়ে তারা তাদের পকেট ভারী করছে। আর ওই কথিত সাংবাদিকরাই এই মাটি খেকো চক্রকে টিলা কাটার সু-ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন প্রশাসনের বিভিন্ন সেক্টরকে ম্যানেজ করে বলেও অভিযোগ প্রকাশ। তাদের সাথে অর্থনৈতিক লেনদেনের কারণে এই চক্রটি আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।

 

তবে সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে- এই জালাল উদ্দীন উরফে দালাল জালালকে দেখা যায় আবার টিলা কাটার বিরুদ্ধে বিভিন্ন কথিত ফেসবুক লাইভ পেইজে টিলা কাটার বিরুদ্ধে প্রশাসনসহ স্থানীয় কিছু গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গের বিরুদ্ধে অযথা অপবাদ রটাতে। কিন্তু এলাকায় টিলা কাটার মতো পরিবেশ বিধ্বংসী কাজ সে নিজেই করছে। এক কথা বলা যায় “চোরের মুখে রাম রাম”।

 

সিলেটের পরিবেশবিদরা এমনটাই দাবি করছেন টিলা গুলো কাটার কারণে আজ বার বার সিলেটে ভূমিকম্প হচ্ছে। এতে টিলা কাটা থেকে বিরত থাকার অনুরোধ করছেন তারা। এই টিলা গুলো হয়তো একদিন আমাদের সিলেটবাসীকে রক্ষা করবে।

 

এদিকে প্রকাশ্য দিবালোকে টিলা কাটার মহোৎসব চললেও অদৃশ্য কারণে সিলেট বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তর ও স্থানীয় থানা পুলিশের নীরব ভূমিকায় জনসাধারণ ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

 

উল্লেখ্য, পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫-এর ৬ (খ) ধারা অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সরকারি বা আধা সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন বা দখলাধীন বা ব্যক্তি মালিকানাধীন পাহাড় ও টিলা কর্তন বা মোচন করতে পারবে না। তবে অপরিহার্য জাতীয় স্বার্থে প্রয়োজনে অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নিয়ে পাহাড় বা টিলা কাটা যেতে পারে। আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ড ও ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে।

 

তাই স্থানীয় সচেতন মহল এই টিলা খেকোদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তার নিকট আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।

এই পোস্টটি আপনার সামাজিক মিডিয়াতে সেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রনজিৎ বর্মন শ্যামনগর(সাতক্ষীরা)প্রতিনিধি ঃ

সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলায় নীলাকাশ টুডের সম্পাদক মোঃ নুরুজ্জামানের সড়ক দূর্ঘটনায় মর্মান্তিকভাবে মৃত্যু হয়েছে।

শুক্রবার (২৬ জুলাই) রাত সাড়ে দশটায় শ্যামনগর উপজেলা সদরের নিকবর্তী গোপালপুর সড়কে কুলখালী নামক স্থানে দূর্ঘটনাটি ঘটে।

নিহতের পরিবার ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায় রাত সাড়ে দশটায় নিজ বাইসাইকেল যোগে নিজ বাড়ী উপজেলার নুরনগর ইউপির নুরনগর গ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা হন। এ সময় গোপালপুর মুক্তিযোদ্ধা সড়কে কুলখালী নামকস্থানে নির্মানাধীন বক্স কালভার্টের গর্তে সাইকেল সহ পড়ে যান। নির্মানাধীন বক্স কালভার্টের বাহিরে বের হওয়া লোহার রড তার মাথায় ছিদ্র হয়ে ঢুকে যেয়ে এক পাশ থেকে অপরপাশে বের হয়ে যায় পর স্থানীয়রা শ্যামনগর উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাঃ আনিছুর রহমান মৃত বলে ঘোষণা করেন।

শ্যামনগর প্রেসকাবের সাবেক সভাপতি আকবর কবীর বলেন কিছুদিন পূর্বে এই বক্স কালভার্ট তৈরী করতে যেয়ে একই সড়কে মোমিন মল্লিক নামে এক শ্রমিক মারা যান। তিনি আরও বলেন  নির্মানাধীন বক্স কালভার্টের  ঠিকাদার হিসাবে কাজ করছেন এস এম আবুল বাসার।

নীলাকাশ টুডের সম্পাদক মোঃ নুরুজ্জামানের মৃত্যুতে গভীর ভাবে শোক প্রকাশ করেছেন সাতক্ষীরা-৪ আসনের এমপি এস এম আতাউল হক দোলন, শ্যামনগর উপজেলা প্রেসকাবের আহবায়ক শেখ আফজালুর রহমান সহ সকল সাংবাদিকবৃন্দ, সুন্দরবন প্রেসকাবের সাংবাদিকবৃন্দ প্রমুখ।

ছবি- নিহত নীলাকাশ টুডের সম্পাদক মোঃ নুরুজ্জামান।

রনজিৎ বর্মন
তাং-২৭.৭.২৪

নীলাকাশ টুডের সম্পাদক নুরুজ্জামান সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত।

অরবিন্দ কুমার মণ্ডল, কয়রা, খুলনাঃ

খুলনার কয়রায় জনপ্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে নিরাপদ খাদ্য বিষয়ক সচেতনতামূলক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে।
১৬ জুলাই মঙ্গলবার দুপুর ১২ টায় উপজেলা পরিষদের সম্মেলন কক্ষে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ খুলনা জেলার আয়োজনে ও কয়রা উপজেলা প্রশাসনের সহযোগীতায় এ সচেতনতামূলক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুলী বিশ্বাসের সভাপতিত্বে সচেতনতামূলক সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্হিত ছিলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান জি এম মোহসিন রেজা। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্হিত ছিলেন, উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নাসিমা আলম।
এসময় আরও উপস্হিত ছিলেন, কয়রা সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এস এম বাহারুল ইসলাম, উত্তর বেদকাশী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সরদার নুরুল ইসলাম কোম্পানি, দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আছের আলী মোড়ল, মহারাজপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আবদুল্লাহ আল মাহমুদ, মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহনেওয়াজ শিকারী, বাঙ্গালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুস সামাদ গাজী, আমাদী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান জুয়েল সহ সাতটি ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যবৃন্দ।

নিরাপদ খাদ্যের মূল প্রবন্ধ উপস্হাপন করেন খুলনা জেলা নিরাপদ খাদ্য অফিসার মোঃ মোকলেছুর রহমান।

কয়রায় নিরাপদ খাদ্য বিষয়ক সচেতনতামূলক সেমিনার অনুষ্ঠিত।