নাজমুল হক সনি, সাপাহার (নওগাঁ) প্রতিনিধিঃ-
নওগাঁর সাপাহার উপজেলায় আমচাষিরা এ বছর আম চাষে যেমন বিপ্লব ঘটিয়েছেন ঠিক তেমনই করলা চাষ করে এখন অনেক কৃষক স্বাবলম্বী। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবারাহ হওয়ায় লাভের মুখ দেখছে করলা চাষিরা। করলা বিক্রি করে অনেকেই এখন স্বচ্ছল ভাবে হাসি-খুসি জীবন যাপন করছে। বেশ কয়েক বছর আগে থেকেই এই উপজেলার চাষিরা করলা সবজি চাষে উৎসাহিত হয়ে তাদের হাইব্রিড আম বাগানে গাছের ফাঁকে ফাঁকে সাথী ফসল হিসেবে করলা চাষ করে স্থানীয় বিভিন্ন হাট বাজারে বিক্রি করে সংসারের খরচ মিটিয়ে কিছু টাকা লাভ করত। পরবর্তীতে করলা চাষের খবর বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান হতে কাঁচা তরিতরকারির ব্যবসায়ীরা ছুটে চলে আসেন সাপাহারে। পরবর্তীতে এরই ধারাবাহিকতায় উপজেলার করলা চাষিদের সেন্টার হিসেবে সাপাহার-তিলনা পাকা সড়কের বাহাপুর মোড়ে গড়ে ওঠে মৌসুমি প্রতিদিনের জন্য ৩-৪ ঘণ্টার এক অস্থায়ী বাজার। ভোর হলেই বিভিন্ন এলাকার করলা চাষিরা তাদের উৎপাদিত করলা নিয়ে চলে আসে এই বাজারে এবং ক্রেতারা তাদের কাছে বিভিন্ন দামে ক্রয় করে মিনি ট্রাক যোগে সকাল ১০টার মধ্যেই রওনা হয়ে যায় নিজ গন্তব্যে। বর্তমানে প্রতি মণ করলা ৯শ” টাকা থেকে ১২শ’ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল প্রাকৃতিক দুর্যোগ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় হয়ত বাজার কিছুটা বৃদ্ধি পাবে বলেও অনেক চাষি মনে করছেন। প্রতিবছর আগস্ট এর ১৫ তারিখ হতে অক্টোবরের ১৫-২০ তারিখ পর্যন্ত চলে এই মৌসুমি অস্থায়ী বাজার। আমের পরে সবজি চাষেও এবার রাজধানী ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন জেলার মানুষ চিনবে সাপাহারকে এমনটাই মনে করছেন উপজেলার অভিজ্ঞ কৃষকগণ। সরেজমিনে ওই বাজারে দেখা যায়, প্রতি মণ করলা ৯শ” থেকে ১২শ’ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। করলার অস্থায়ী এই বাজারে এসে ঢাকার কওরান বাজারের আনোয়ার হোসেন নামের এক সবজি ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, সাপাহারের করলা সবজির গুণগতমান ভাল ও এখান থেকে করলা কিনে লাভ ভাল হওয়ায় তিনি বেশ কয়েক বছর ধরে এখানকার করলা রাজধানী ঢাকার কাওরান বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করছেন।
এলাকার স্থানীয় করলা চাষি নজরুল ইসলাম, ছয়ফুল ইসলাম ও আব্দুল মমিন সহ বেশ কিছু কৃষকের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, অস্থায়ীভাবে উপজেলা সদরের বাহিরে এই স্থানে করলার বাজার গড়ে না উঠলে এখানকার চাষিরা এই হারে করলা চাষাবাদ করতেন না। বর্তমানে তারা সহ অনেকেই এখন করলা চাষ করে সফলতার মুখ দেখছেন। এই বাজারের ক্রেতা বিক্রেতাগন জানান, প্রতিদিন এই বাজার হতে প্রায় ১ শত থেকে ১৫০ টন করলা দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ হয়ে থাকে।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি অফিসার মজিবুর রহমান এর সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, কয়েক বছর ধরে করলা চাষ এ উপজেলায় চাষিদের মাঝে এক নিরব বিপ্লব ঘটিয়েছে। কৃষি অফিসের পরামর্শে উপজেলার অনেকেই এখন দেশি, হাইব্রিড, সোনামুখীসহ বিভিন্ন জাতের করলা চাষাবাদ করে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছেন। কৃষি অফিসের তথ্য মতে এ বছর উপজেলায় ১৫০ থেকে ২ শত বিঘা জমিতে করলা চাষাবাদ হয়েছে। করলা ক্ষণস্থায়ী ফসল হলেও এবারে এর ব্যাপক ফলন হয়েছে দামও রয়েছে কৃষকের মনের মতো। আবহাওয়া আর কিছু দিন চাষিদের অনুকূলে থাকলে করলা চাষের মেয়াদ বৃদ্ধি পাবে বলেও কৃষি অফিসার জানিয়েছেন।
সাপাহার উপজেলার আমচাষিগণ এ বছর আম চাষে যেমন এক বিপ্লব ঘটিয়েছেন ঠিক তেমনটাই করলা চাষেও বিপ্লব ঘটাবে বলে করলা চাষি ও উপজেলা কৃষি দফতর মনে করছেন।
Leave a Reply