২৯শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ।১৪ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।শুক্রবার

শিশু যখন শ্রমিক

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

সম্পাদকীয় ॥

যে বয়সে বইখাতা হাতে নিয়ে স্কুলে যাওয়ার কথা, খেলার মাঠে নিমগ্ন হওয়ার কথা, সে বয়সে যেতে হয় আয়-রোজগারে। নামতে হয় ঝুঁকিপূর্ণ কাজে। বেঁচতে হয় শ্রম। দু’বেলা দু’মুঠো যোগাড়ে অবস্থা হয় প্রাণান্তকর। কুঁড়িগুলো তাই আর ফুল হয়ে ফুটতে পারে না। অচিরেই যায় ঝরে।

‘শিশুরাই জাতির ভবিষ্যত’ এই নীতিবাক্য তাদের জীবনে কখনই ধরা দেয় না। এক অন্ধকারাচ্ছন্ন জগত তাদের সবকিছুতেই জড়িয়ে যায়। শ্রমে যুক্ত হওয়ার কারণে শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ হয় ব্যাহত।

এই রাজধানীতেই প্রতিদিন দৃশ্যমান হয় শিশু শ্রমিকদের কষ্টকর শ্রমজীবন। কোমল যে হাত, সে হাতে ভারি জিনিস বহন করতে হয়। তুলে নিতে হয় হাতুড়িও। ভাঙতে হয় ইট, কিংবা পাটকেল, কিংবা বাস, টেম্পো, লেগুনায় হেলপারের মতো কঠিন কঠোর কাজও আয়ত্ত করে নিতে হয় অল্প বয়সেই। হোটেলে ‘পিচ্চি’ হিসেবে অভিহিত হয়ে কাজ করতে হয় নানারকম। শারীরিক সামর্থ্যে হয়ত কুলোয় না। একটু ভুলত্রুটি হলে কাজে, বকাঝকা বরাদ্দ হয়ে যায়, এমনকি গায়েও হাত তোলে।

বাসাবাড়ির কাজেও এই শিশুরা বারো ঘণ্টার মতো কাজ করে, প্রায়শই মারধর থেকে রেহাই মেলে না। পর্যাপ্ত খাবার কিংবা ঘুমোবার স্থানও থাকে না। পিতৃ-মাতৃ স্নেহবঞ্চিত এই শিশুরা বড় হয়ে ওঠে অনিশ্চয়তাকে ভর করে। এই করুণ কষ্টকর অবস্থা থেকে বুঝি মুক্তি নেই। যুগ যুগ ধরে তারা নিরন্তর ঝুঁকির ভেতর দিয়ে পাড়ি দেয়। রাষ্ট্রব্যবস্থা তাদের প্রতি সহমর্মী, সমব্যথী এমনটা নয়। তবে আইন রয়েছে। কিন্তু সে আইনও যেন কাজীর গরু কেতাবে থাকার মতো। আর শুধু আইন দিয়ে শিশুশ্রম নিরসন সম্ভব নয়। অথচ শ্রম আইনানুযায়ী শিশুদের ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োগ দেয়া যায় না।

এ ছাড়া শিশুদের দিয়ে পাঁচ ঘণ্টার বেশি কাজ করানো ও চৌদ্দ বছরের কম বয়সী শিশুদের শ্রম একেবারেই নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অথচ বাস্তব দৃশ্য যা তাতে এই আইন প্রয়োগের কোন অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না। আইনে আছে কোন শিশু বা কিশোরকে চাকরিতে নিয়োগ দিলে বা আইনের কোন বিধান লঙ্ঘন করে কোন শিশু বা কিশোরকে চাকরিতে নিয়োগ দিলে অথবা আইনের কোন বিধান লঙ্ঘন করে কোন শিশু বা কিশোরকে চাকরি করার অনুমতি দিলে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদন্ড দিতে হবে। আর কোন শিশুর বাবা-মা বা অভিভাবক এই পঁয়ত্রিশ ধারা অমান্য করে কোন শিশু সম্পর্কে চুক্তি করলে তাকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদন্ড দিতে হবে। অথচ বাস্তবে যেসব শিশুকে কাজে নিয়োগ দেয়া হয়, সেখানে কোন নিয়োগপত্র থাকে না। চুক্তিও নয়। যে কোন সময়ে যে কোন শিশু কর্মচ্যুত হতে পারে যে কোন কাজ থেকে। ফলে আইন আর সেখানে পৌঁছে না।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবে দেশে মোট শিশুর সংখ্যা অন্তত সাড়ে পাঁচ কোটি। এর মধ্যে শিশু শ্রমিকের সংখ্যা দেড় কোটিরও বেশি। ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমে শিশু শ্রমিকের সংখ্যা বাড়ছে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার এক শিশুশ্রম সমীক্ষা অনুযায়ী দেশে কর্মজীবী শিশুর সংখ্যা প্রায় ৩৬ লাখ। এর মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমে নিয়োজিত রয়েছে ১৩ লাখ শিশু। শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বে পাঁচ থেকে চৌদ্দ বছর বয়সী শিশু শ্রমিকের সংখ্যা ১২০ মিলিয়ন। এদের মধ্যে ছেলে ও মেয়ে শিশু সমভাবে জড়িত। অবশ্য শিশুশ্রমের দিক থেকে বিশ্বের ১৪০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। দেশের তিন শতাধিক কাজে অন্তত ৭৪ লাখ শিশু নিয়োজিত। এরা কলকারখানা, বাসাবাড়ি, টেম্পো, বাস, লেগুনায় হেলপার ইটভাঙা, ময়লা-আবর্জনা টোকোনো, খাবার দোকান, ওয়ার্কশপের ঝুঁকিপূর্ণ কাজে জড়িত। শ্রমে যুক্ত হওয়ার কারণে শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ব্যাহত হয়। বর্তমানে কলকারখানায় শিশুশ্রমের সংখ্যা বাড়ার কারণ এদের মজুরি নামমাত্র। বড়দের মতো কাজ করে ৮৫ শতাংশ শিশু।

কর্মক্ষেত্রে দূষিত পরিবেশে কাজ করছে ১৭ শতাংশ। কর্মক্ষেত্রে মালিক দ্বারা শোষিত ও নির্যাতনের শিকার হয় প্রায় শিশুই। সঙ্কট-দুর্যোগ যাই হোক, শিশুশ্রম বন্ধ হোক বলে যতই হাঁকডাক দেয়া হোক, বাস্তবতায় তা ধোপে টেকে না। সরকার ২০২১ সালের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম নিরসনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে। এর আগে তা করার কথা থাকলেও হয়নি। শিশুশ্রমকে সামাজিকভাবে বর্জন করা দুরূহ। কারণ হতদরিদ্র, অতিদরিদ্র অবস্থার পরিবর্তন না হলে দু’বেলা দু’মুঠো খাবার যোগাড় করতে শিশুদের শ্রমজীবী হতেই হয়। শুধু আইন দিয়ে কিছুই করা সম্ভব নয়।

এই পোস্টটি আপনার সামাজিক মিডিয়াতে সেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রনজিৎ বর্মন শ্যামনগর(সাতক্ষীরা)প্রতিনিধি ঃ

সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলায় নীলাকাশ টুডের সম্পাদক মোঃ নুরুজ্জামানের সড়ক দূর্ঘটনায় মর্মান্তিকভাবে মৃত্যু হয়েছে।

শুক্রবার (২৬ জুলাই) রাত সাড়ে দশটায় শ্যামনগর উপজেলা সদরের নিকবর্তী গোপালপুর সড়কে কুলখালী নামক স্থানে দূর্ঘটনাটি ঘটে।

নিহতের পরিবার ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায় রাত সাড়ে দশটায় নিজ বাইসাইকেল যোগে নিজ বাড়ী উপজেলার নুরনগর ইউপির নুরনগর গ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা হন। এ সময় গোপালপুর মুক্তিযোদ্ধা সড়কে কুলখালী নামকস্থানে নির্মানাধীন বক্স কালভার্টের গর্তে সাইকেল সহ পড়ে যান। নির্মানাধীন বক্স কালভার্টের বাহিরে বের হওয়া লোহার রড তার মাথায় ছিদ্র হয়ে ঢুকে যেয়ে এক পাশ থেকে অপরপাশে বের হয়ে যায় পর স্থানীয়রা শ্যামনগর উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাঃ আনিছুর রহমান মৃত বলে ঘোষণা করেন।

শ্যামনগর প্রেসকাবের সাবেক সভাপতি আকবর কবীর বলেন কিছুদিন পূর্বে এই বক্স কালভার্ট তৈরী করতে যেয়ে একই সড়কে মোমিন মল্লিক নামে এক শ্রমিক মারা যান। তিনি আরও বলেন  নির্মানাধীন বক্স কালভার্টের  ঠিকাদার হিসাবে কাজ করছেন এস এম আবুল বাসার।

নীলাকাশ টুডের সম্পাদক মোঃ নুরুজ্জামানের মৃত্যুতে গভীর ভাবে শোক প্রকাশ করেছেন সাতক্ষীরা-৪ আসনের এমপি এস এম আতাউল হক দোলন, শ্যামনগর উপজেলা প্রেসকাবের আহবায়ক শেখ আফজালুর রহমান সহ সকল সাংবাদিকবৃন্দ, সুন্দরবন প্রেসকাবের সাংবাদিকবৃন্দ প্রমুখ।

ছবি- নিহত নীলাকাশ টুডের সম্পাদক মোঃ নুরুজ্জামান।

রনজিৎ বর্মন
তাং-২৭.৭.২৪

নীলাকাশ টুডের সম্পাদক নুরুজ্জামান সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত।

অরবিন্দ কুমার মণ্ডল, কয়রা, খুলনাঃ

খুলনার কয়রায় জনপ্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে নিরাপদ খাদ্য বিষয়ক সচেতনতামূলক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে।
১৬ জুলাই মঙ্গলবার দুপুর ১২ টায় উপজেলা পরিষদের সম্মেলন কক্ষে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ খুলনা জেলার আয়োজনে ও কয়রা উপজেলা প্রশাসনের সহযোগীতায় এ সচেতনতামূলক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুলী বিশ্বাসের সভাপতিত্বে সচেতনতামূলক সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্হিত ছিলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান জি এম মোহসিন রেজা। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্হিত ছিলেন, উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নাসিমা আলম।
এসময় আরও উপস্হিত ছিলেন, কয়রা সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এস এম বাহারুল ইসলাম, উত্তর বেদকাশী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সরদার নুরুল ইসলাম কোম্পানি, দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আছের আলী মোড়ল, মহারাজপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আবদুল্লাহ আল মাহমুদ, মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহনেওয়াজ শিকারী, বাঙ্গালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুস সামাদ গাজী, আমাদী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান জুয়েল সহ সাতটি ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যবৃন্দ।

নিরাপদ খাদ্যের মূল প্রবন্ধ উপস্হাপন করেন খুলনা জেলা নিরাপদ খাদ্য অফিসার মোঃ মোকলেছুর রহমান।

কয়রায় নিরাপদ খাদ্য বিষয়ক সচেতনতামূলক সেমিনার অনুষ্ঠিত।