মোঃ মাসুদ রানা রাশেদ:
লালমনিরহাট সদর সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে জমি রেজিস্ট্রারীতে দলিল অবমুল্যায়নে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগ বেশ পুরানো। কিন্তু এবার অবমুল্যায়ন দলিল রেজিষ্ট্রারী করেও পুনরায় রাজস্ব ফাঁকির টাকা জমা করে ফেঁসে গেল দলিল লেখক মোঃ রমজান আলী। উক্ত দলিল লেখককে এক আদেশে সাময়িক ভাবে বরখাস্ত করেন লালমনিরহাট সদর সাব-রেজিস্ট্রার আঃ রশিদ। তবে নাটকীয় রাজস্ব ফাঁকি ঘটনা বরখাস্তকৃত দলিল লেখক বরখাস্তের আগেই জবাব দিয়েছেন।
জানা গেছে, লালমনিরহাট শহরের তালুক খুটামারা দালালটারী এলাকার মৃত: ইমামুদ্দিনের পুত্র মোঃ হাসেম আলীর মোস্তফি মৌজার ১৭শতক ৩১পয়েন্ট জমি ব্যক্তিগত সমস্যার কারণে লালমনিরহাট সদর উপজেলার গোকুন্ডা ইউনিয়নের ভুড়িধোঁয়া গ্রামের মৃত: হানিফ আলীর পুত্র মোঃ জিয়ারুল রহমান ও মোঃ এন্তাজুর হক এর নিকট সাব-কবলা মুলে বিক্রি করেন। যার চুড়ান্ত খতিয়ান নং ১১১৮, জেএল নং ৬৮, তৌজি নং ২২০, দাগ নং ৮৯৫ জমির পরিমাণ ১৭শতক ৩১পয়েন্ট। যার দলিল নং- ৪১২৯। তাং ১৮/০৭/২১ ইং। উক্ত জমির দলিল লেখক মোঃ রমজান আলী। যার সনদ নং-০৮/২০০৯ইং। তিনি ওই জমির শ্রেণি ডাঙ্গা থাকলেও কৌশলে তা দলা, ডোবা ও বাঁশঝাড় করেন। তাছাড়া সাব-রেজিস্ট্রারের চোখে ধুলা দিয়ে মাত্র ১লক্ষ ২৯হাজার টাকার মূল্য একখানা দানপত্র দলিল রেজিষ্টারী করে নেন। ওই এলাকার সরকারি নির্ধারিত মূল্য অনুযায়ী দলিলটিতে ২লক্ষ ৭৬হাজার টাকার বিপরীদে ১৫হাজার ১শত ৮০টাকার রাজস্ব ও স্ট্যাম্প ফাঁকি দেয়া হয়। এ নিয়ে দলিল লেখকদের মাঝে আলোচনা ও সমালোচনায় ফাঁস হয়ে পড়ে। কিন্তু অবমুল্যায়ন দলিলটি রেজিষ্ট্রারীর ১মাস পেরিয়ে গেলেও তখন পর্যন্ত রহস্যজনক কারণে দলিল লেখক মোঃ রমজান আলীর বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ।
এরেই প্রেক্ষিত গত ১৩ আগস্ট বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে সদর সাব-রেজিস্ট্রার আঃ রশিদ নড়েচড়ে বসেন। ওই সময় তিনি বলেন, আমি বিষয়টি ইতিমধ্যে জেনে গেছি। সংশ্লিষ্ট দলিল লেখককে দলিল অবমুল্যায়নের ঘাটতি টাকা ব্যাংকে জমা দিতে বলেছি এবং তাকে সাময়িক ভাবে বরখাস্ত করে জবাব চাওয়া হবে। ১৬ আগস্ট আসেন সব তথ্য পাবেন।
১৬ আগস্ট, আবারও তথ্য নিতে সদর সাব-রেজিস্ট্রার আঃ রশিদ এর কাছে গেলে তিনি অফিস সহকারী শাহ আলমকে দলিল অবমুল্যায়নের সব তথ্য দিতে বলেন।
অফিস সহকারী শাহ আলম বলেন, দলিল লেখককে সাময়িক বরখাস্তের চিঠি এখনো দেয়া হয়নি। চিঠি খসড়া করা হয়েছে। ১৭ আগস্ট, আসেন এর মাঝে দলিল লেখককে চিঠি দেয়া হবে। ওই দলিল লেখককে ১৭ আগস্ট সাময়িক বরখাস্তের চিঠি দেয়া হয়। যার স্মরক নং ৬০। তাং ১৯/০৭/২১ইং।
১৭ আগস্টের ইস্যুকৃত চিঠিতে ১৯ জুলাই তারিখের রহস্য কি, অফিস সহকারী শাহ আলম বলেন, সাব-রেজিস্ট্রার স্যার জানেন, আমি কিছু বলতে পাড়বো না।
সাময়িক বরখাস্তের চিঠিটি এক মাস পূর্বের তারিখ দিয়ে ইস্যু’র আদেশে বলা হয়, পরর্বতী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত রমজান আলীকে দলিল লিখিত পঠিত ও মুসাবিদা করণ থেকে বিরত থাকার জন্য বলা হল। উক্ত নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে দলিল লেখক রমজান আলী প্রায় প্রতিদিন কারও না কারও লাইসেন্স ব্যবহার করে দলিল লিখিত পঠিত ও মুসাবিদা করছেন।
একটি বিশ্বাস্থ্য সূত্র জানান, ২০০৯ সাল থেকে আজ পর্যন্ত দলিল লেখক রমজান আলী যত দলিল করেছে তার অর্ধেকেই (অবমুল্যায়ন) সরকারী রাজস্ব ফাঁকি দেয়া হয়েছে। যা তদন্ত করলে প্রমাণ মিলবে।
এখানে আসল আর নকলের কোন ভেদাভেদ নেই, টাকা হলে সব হয়। দলিল লেখক রমজানেও কিছু হবে না। যা হচ্ছে তা লোক দেখানো। এসব ঘটনায় আজ পর্যন্ত কারও লাইসেন্স বাতিল বা শাস্তি হয়নি।
এ বিষয়ে দলিল লেখক রমজান আলী সাংবাদিকদের বলেন, সরকারী রাজস্ব ঘাটতি টাকা, আমি তা ব্যাংকে জমা করেছি। তারপরেও আমার কাছে জবাব চেয়ে সাব-রেজিস্টার চিঠি দিয়েছেন। আমি জবাবও দিয়েছি। সাব-রেজিস্ট্রারের চিঠি কবে পেয়েছেন এমন প্রশ্নের জবাবে রমজান আলী সাংবাদিকদের বলেন, আমি ১৭ আগস্ট চিঠি পেয়েছি এবং জবাবও দিয়েছেন। ১৯ জুলাইয়ের চিঠি ১৭ আগষ্ট পেলেন আবার জবাবও দিলেন এমন প্রশ্নের কোন উত্তর দিতে পারেননি।
লালমনিরহাট সদর সাব রেজিস্ট্রার আব্দুর রশিদ সাংবাদিকদের বলেন, ফাঁকি দেয়া রাজস্ব আদায় পূর্ব অভিযুক্ত দলিল লেখককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। বরখাস্তর আগেই জবাব দিল দলিল লেখক রমজান আলী এমন প্রশ্নে জবারে সাব রেজিস্ট্রার সাংবাদিকদের বলেন, আমি অফিসের নিয়ম মেনে তার কাছে জবাব চেয়েছি।
এ ব্যাপারে জেলা রেজিস্ট্রার খালিদ মোহম্মদ বিন আসাদ সাংবাদিকদের জানান, সাব রেজিস্ট্রি অফিসের রাজস্ব ফাঁকির ঘটনায় আমি কিছুই জানি না। তবে অভিযোগ হলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
Leave a Reply