নয়ন দাস,কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধিঃ
কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী উপজেলায় শিরিনা আক্তার (১৮) নামের এক এইচএসসি পরীক্ষার্থীর রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। গত ৩০ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে উপজেলার দাঁতভাঙ্গা ইউনিয়নের ছাটকড়াইবাড়ী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। শিরিনা ছাটকড়াইবাড়ী গ্রামের দাঁতভাঙ্গা পোস্ট অফিসের পিয়ন সিরাজুল ইসলামের মেয়ে।
সে এ বছর দাঁতভাঙ্গা স্কুল অ্যান্ড কলেজের মানবিক বিভাগের এইচএসসি পরীক্ষার্থী। মেয়ের মৃত্যুতে শোকবিহল শিরিনার মা মোছা. মেহেনিমা বেগম অভিযোগ করে জানান, ২০১৯ সালে উজান ঝগড়ার গ্রামের গিয়াস উদ্দিনের ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান মিঠুনের সাথে দু’পক্ষের সম্মতিতে শিরিনার বিবাহ রেজিষ্ট্রি করা হয়।
বিবাহ রেজিষ্ট্রির পরে মিঠুন সেনাবাহিনী সদস্য হিসেবে চাকরিতে যোগদান করেন। মিঠুন সেনাবাহিনীতে চাকুরি পাওয়ার পর সে অন্য স্থানে গোপনে আবারো বিবাহ করে। পরে স্ত্রী হিসেবে স্বীকৃতি পেতে আমার মেয়ে বাদী হয়ে কুড়িগ্রাম আদালতে মিঠুন, তার বাবা গিয়াস উদ্দিন ও মাতার নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
অপরদিকে নিহত শিরিনার চাচা নইমউদ্দিন ওরফে বালা জানান, কয়েকদিন আগের গভীর রাতে নাহিদ হাসান আমার ভাজতির (শিরিনা) ঘরে ঢুকলে তাকে আটক করা হয়। পরে নাহিদের বাবা শাজাহান আলী শিরিনার সঙ্গে বিবাহ দিবেন বলে দু’দিন সময় নিলে নাহিদকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
তিনি আরও বলেন, দু’দিন পড় জানতে পারি নাহিদ ইটালুকান্দা গ্রামে অন্য এক মেয়ের সঙ্গে বিবাহ সম্পন্ন করেছেন। ঘটনার দিন বৃহস্পতিবার দুপুরে দাঁতভাঙ্গা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশে নাহিদ ভাজতি শিরিনার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছেন বলে জানতে পারি। পরে মেয়েটি আত্মহারা হয়ে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে।
আমি মিঠুন ও নাহিদের বিচার চাই। এলাকাবাসীর দাবি, এইচএসসি পরীক্ষার্থী শিরিনা আক্তারের সঙ্গে সেনা সদস্যের বিয়ে হলেও ছেলের পক্ষ মেনে নেয়নি। অপর দিকে একই গ্রামের রৌমারী সরকারি কলেজের দপ্তরি শাজাহান আলীর ছেলে নাহিদ হাসানের প্রেমের সর্ম্পক ছিল।
ঘটনার দিন নাহিদের সাথে দাঁতভাঙ্গা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের পিছনে তাদের মধ্যে কথাকাটা হয় এবং মেয়েটিকে মারপিট করে। সেখান থেকে বাড়িতে ফিরে এসেই আত্মহত্যা করে। এর পর থেকে তার প্রেমিক নাহিদ ও সেনা সদস্যের পরিবার পলাতক রয়েছে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মিজানুর রহমান জানান, শিরিনা নামের এক কলেজ ছাত্রী গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছে। পরে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে রৌমারী থানায় নিয়ে যায়। তবে কি কারনে আত্মহত্যা করেছে তা আমার জানা নেই।
দাঁতভাঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান এসএমএ রেজাউল করিম বলেন, আমি ঘঁটনাস্থলে গিয়ে জানতে পাই সেনাসদস্যের সাথে বিবাহ রেজিস্ট্রি হলেও ছেলেটি অন্যত্র বিবাহ করে। এতে সহ্যকরতে না পেরে আত্মহতার পথ বেছে নেয়।
রৌমারী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. একরামুল হক বলেন, প্রাথমিকভাবে নিহত শিরিনা আক্তারের গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যার চিত্র পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে রৌমারী থানার ওসি মোন্তাছের বিল্লাহ্ জানান, এইচএসসি পরীক্ষার্থী শিরিনার মরদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য কুড়িগ্রাম মর্গে পাঠানো হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ময়না তদন্তের প্রতিবেদন ও নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Leave a Reply