৪ঠা নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ।১৯শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।সোমবার

রংপুরে হারাগাছে মা ও শিশু কল্যাল কেন্দ্রে রাতে সেবা বন্ধ: ঝোপঝাড়ে সন্তান প্রসব এক মা।

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

রিয়াজুল হক সাগর, রংপুর জেলা প্রতিনিধিঃ

রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার শ্রমিক অধ্যুষিত হারাগাছে অসহায় ও দরিদ্র পরিবারের গর্ভবর্তী নারীদের স্বাস্থ্য সেবা এবং নিরাপদ ও স্বাভাবিক সন্তান প্রসবের একমাত্র আশ্রয়স্থল হারাগাছ মাতৃমঙ্গল বা মা ও শিশু কল্যাল কেন্দ্র। কিন্তু স্বাস্থ্য কেন্দ্রে বিকেল থেকে পরদিন সকাল পর্যন্ত প্রতিদিনি ১৮ ঘন্টা সেবা কার্যক্রম বন্ধ থাকে। ফলে রাতে কোন গর্ভবর্তী নারী নিরাপদ ও স্বাভাবিক সন্তান প্রসবের জন্য এসে বিপাকে পড়ে কেন্দ্রের আশপাশ ঝোপঝাড়ে সন্তান প্রসব করছেন। গত মঙ্গলবার রাতে সাড়ে ১২ টার দিকে হারাগাছ ইউনিয়নের চরনাজিরদহ মফিজপাড়া গ্রামের শাহাদত হোসেনের গর্ভবর্তী স্ত্রী লিমা বেগম নিরাপদ ও স্বাভাবিক সন্তান প্রসব করতে এসে মা ও শিশু কল্যাল কেন্দ্রের ভবনের আশপাশ মাঠে ঘাসের উপর সন্তান প্রসব করেন। লিমা বেগমের স্বামী শাহাদত হোসেন বলেন, আল্লাহর রহমতে স্ত্রী ও সন্তান বেচে গেছে। আর কিছু সময় পাড় হলে স্ত্রী-সন্তান দুইজনেই মারা যেত। তিনি বলেন, গত মঙ্গলবার সন্ধায় তার স্ত্রীর সন্তান প্রসবের ব্যাথা উঠে। বাড়ীতে স্থানীয় দাইরা চেষ্ঠা করা হয়। পরে নিরাপদ ও স্বাভাবিক সন্তান প্রসবের জন্য রাত সাড়ে ১১ টার দিকে হারাগাছ মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে স্ত্রীকে নিয়ে আসি। কিন্তু মাতৃমঙ্গল কেন্দ্রে কোন ডাক্তার ও নার্স কেউই নাই, কেন্দ্রের কেচি গেটে তালা ঝুলছে। প্রসবের ব্যাথায় স্ত্রী ছটফট করতে থাকে। পরে কেন্দ্রের ভবনের পাশে ঘাসের উপর শুয়ে পড়ে মেয়ে সন্তান প্রসব জন্ম দেয় তার স্ত্রী। পরে রাত একটার দিকে অটোবাইকে করে স্ত্রী ও মেয়ে সন্তারকে বাড়ীতে নিয়ে যান । স্থানীয়রা জানায়, হারাগাছের বেশির ভাগ মানুষ শ্রমিক। তাদের পক্ষে শহরের বেসরকারি হাসপাতালে গর্ভবর্তী নারীদের চিকিৎসাসেবা নেওয়া অসম্ভব। শ্রমিক পরিবারের গর্ভবর্তী নারীদের একমাত্র নিরাপদ ও স্বাভাবিক সন্তান প্রসবের আশ্রয়স্থল হারাগাছ মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র। কিন্তু মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে অনেক গর্ভবর্তী নারীরা সেবা পায় না। দীর্ঘদিন ধরে রাতেই বেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে সেবা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এখানে যারা দায়িত্বে রয়েছেন তারাও ঠিকভাবে সেবা প্রদান করেন না। মিনাবাজার এলাকার রানা মিয়া বলেন, হারাগাছ মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের ইনচার্জ পরিবার কল্যান পরিদর্শিকা তিনি প্রায় দিনে আসেন না। মাঝে মাঝে আসেন, অল্প সময় থেকে আবার শহরে চলে যান। ফলে সেবা নিতে আসা অনেক গর্ভবতী নারী বিপদে পড়ে মা ও শিশু কল্যাল কেন্দ্রের আশপাশ ঝোপঝাড়ে সন্তান প্রসব করে ফেলছে। তিনি বলেন, গত মঙ্গলবার রাতেও একজন গর্ভবতী নারী মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের মাঠে ঘাসের উপর সন্তান প্রসব করেছেন। এপর্যন্ত চলতি এক সপ্তাহে রাতের বেলায় তিনজন নারী এভাবে সন্তান প্রসব করেছেন। আকবর আলী নামে আরেক জন বলেন, মা ও শিশুদের মৃত্যু হার কমাতে এবং নিরাপদ ও স্বাভাবিক সন্তান প্রসবের জন্য নিকটস্থ্য স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য প্রতিদিনেই টেলিভিশন ও পত্রিকায় প্রচার করছে। কিন্তু স্বাস্থ্য কেন্দ্রের এই অবস্থায়। অনেকেই সেবা নিতে এসে ফিরে যায়। হারাগাছ মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে রাতে কোন লোক থাকে না । অথচ থাকার জন্য আলাদা ভবন রয়েছে।

হারাগাছ মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের ইনচার্জ পরিবার কল্যান পরিদর্শিকা জান্নাতুল ফেরদৌউস জানান, এখানে তিনি ও দুইজন দাই নার্স সহ তিনজন দায়িত্বে আছেন। যদিও ২৪ ঘন্টা গর্ভবতী নারীদের সেবা দেওয়ার কথা। কিন্তু তিনজনের পক্ষে ২৪ ঘন্টা সেবা দেওয়া সম্ভব না। তিনি বলেন, সপ্তাহে শনিবার থেকে বৃহস্পতিবার ছয়দিন সকাল নয়টা থেকে বিকেল সাড়ে তিনটা পর্যন্ত তারা গর্ভবতী নারীদের সেবা দিচ্ছেন। আগে ল্যাম্ব এনজিওর স্বাস্থ্যকর্মীরা ছিল তখন রাতে সেবা চালু ছিল। এখন এনজিওর স্বাস্থ্যকর্মীরা না থাকায় বিকেল থেকে পরদিন সকাল পর্যন্ত ১৮ ঘন্টা সেবা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। বিষয়টি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ জানেন। এছাড়া তিনি গতকাল বুধবার থেকে চারদিনের ছুটিতে আছেন। এ বিষয়ে উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সহিদুল ইসলাম বলেন, তিনি প্রায় দুই মাস আগে এ উপজেলায় যোগদান করছেন। তিনি যোগদানের পরেই হারাগাছ মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের ইনচার্জ পরিবার কল্যান পরিদর্শিকার ব্যাপারে অভিযোগ জানতে পেরেছেন।বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। নিরাপদ ও স্বাভাবিক সন্তান প্রসব করতে এতে মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের ঘাসের উপর সন্তান প্রসবের বিষয়টি দু:খজনক বলে অভিমত প্রকাশ করেছেন পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো: সাইদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ঘটনাটি তিনি এইমাত্র জানতে পারলেন। নিরাপদ ও স্বাভাবিক সন্তান প্রসবের জন্য ইউনিয়ন পর্যায়ে মা ও শিশু কল্যাণগুলোতে অসহায় দরিদ্র মানুষের আশ্রয়স্থল। কিন্তু জনবল সমস্যা রয়েছে। ফলে সেবা কিছুটা বিগ্নিত হচ্ছে।

এই পোস্টটি আপনার সামাজিক মিডিয়াতে সেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রনজিৎ বর্মন শ্যামনগর(সাতক্ষীরা)প্রতিনিধি ঃ

সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলায় নীলাকাশ টুডের সম্পাদক মোঃ নুরুজ্জামানের সড়ক দূর্ঘটনায় মর্মান্তিকভাবে মৃত্যু হয়েছে।

শুক্রবার (২৬ জুলাই) রাত সাড়ে দশটায় শ্যামনগর উপজেলা সদরের নিকবর্তী গোপালপুর সড়কে কুলখালী নামক স্থানে দূর্ঘটনাটি ঘটে।

নিহতের পরিবার ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায় রাত সাড়ে দশটায় নিজ বাইসাইকেল যোগে নিজ বাড়ী উপজেলার নুরনগর ইউপির নুরনগর গ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা হন। এ সময় গোপালপুর মুক্তিযোদ্ধা সড়কে কুলখালী নামকস্থানে নির্মানাধীন বক্স কালভার্টের গর্তে সাইকেল সহ পড়ে যান। নির্মানাধীন বক্স কালভার্টের বাহিরে বের হওয়া লোহার রড তার মাথায় ছিদ্র হয়ে ঢুকে যেয়ে এক পাশ থেকে অপরপাশে বের হয়ে যায় পর স্থানীয়রা শ্যামনগর উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাঃ আনিছুর রহমান মৃত বলে ঘোষণা করেন।

শ্যামনগর প্রেসকাবের সাবেক সভাপতি আকবর কবীর বলেন কিছুদিন পূর্বে এই বক্স কালভার্ট তৈরী করতে যেয়ে একই সড়কে মোমিন মল্লিক নামে এক শ্রমিক মারা যান। তিনি আরও বলেন  নির্মানাধীন বক্স কালভার্টের  ঠিকাদার হিসাবে কাজ করছেন এস এম আবুল বাসার।

নীলাকাশ টুডের সম্পাদক মোঃ নুরুজ্জামানের মৃত্যুতে গভীর ভাবে শোক প্রকাশ করেছেন সাতক্ষীরা-৪ আসনের এমপি এস এম আতাউল হক দোলন, শ্যামনগর উপজেলা প্রেসকাবের আহবায়ক শেখ আফজালুর রহমান সহ সকল সাংবাদিকবৃন্দ, সুন্দরবন প্রেসকাবের সাংবাদিকবৃন্দ প্রমুখ।

ছবি- নিহত নীলাকাশ টুডের সম্পাদক মোঃ নুরুজ্জামান।

রনজিৎ বর্মন
তাং-২৭.৭.২৪

নীলাকাশ টুডের সম্পাদক নুরুজ্জামান সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত।

অরবিন্দ কুমার মণ্ডল, কয়রা, খুলনাঃ

খুলনার কয়রায় জনপ্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে নিরাপদ খাদ্য বিষয়ক সচেতনতামূলক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে।
১৬ জুলাই মঙ্গলবার দুপুর ১২ টায় উপজেলা পরিষদের সম্মেলন কক্ষে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ খুলনা জেলার আয়োজনে ও কয়রা উপজেলা প্রশাসনের সহযোগীতায় এ সচেতনতামূলক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুলী বিশ্বাসের সভাপতিত্বে সচেতনতামূলক সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্হিত ছিলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান জি এম মোহসিন রেজা। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্হিত ছিলেন, উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নাসিমা আলম।
এসময় আরও উপস্হিত ছিলেন, কয়রা সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এস এম বাহারুল ইসলাম, উত্তর বেদকাশী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সরদার নুরুল ইসলাম কোম্পানি, দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আছের আলী মোড়ল, মহারাজপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আবদুল্লাহ আল মাহমুদ, মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহনেওয়াজ শিকারী, বাঙ্গালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুস সামাদ গাজী, আমাদী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান জুয়েল সহ সাতটি ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যবৃন্দ।

নিরাপদ খাদ্যের মূল প্রবন্ধ উপস্হাপন করেন খুলনা জেলা নিরাপদ খাদ্য অফিসার মোঃ মোকলেছুর রহমান।

কয়রায় নিরাপদ খাদ্য বিষয়ক সচেতনতামূলক সেমিনার অনুষ্ঠিত।