রিয়াজুল হক সাগর, রংপুর জেলা প্রতিনিধিঃ
রংপুরে প্রাইম ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে এক ব্যাংক কর্মকর্তার মাথ্যমে লাখ লাখ টাকা চুরি হওয়ার ঘটনা ঘটেছে । চুরির রহস্য উদঘাটন করে শনিবার রাতে রংপুর নগরী থেকে আবু রায়হান নামে এক ব্যাংক কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করেছে রংপুর পিবিআই পুলিশ।
পিবিআই সূত্র জানায়, গত বছরের ৬ অক্টোবর প্রাইম ব্যাংক রংপুর শাখার এ্যাসিসটেন্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট পীষুয কুমার রায় রংপুর মেট্রোপলিটন থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযোগে বলেন, নগরীর প্রেস ক্লাবের বিপরীতে মন্দিরের পার্শ্বে রংপুর ভবনের নিচতলায় অবস্থিত তাদের ব্যাংকের এটিএম বুথ হতে ৯ লাখ ৬৩ হাজার টাকা অজ্ঞাত হ্যাকার অথবা চোর, ই- ট্রাঞ্জেকশন, ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে চুরি করেছে । মামলাটি এক পর্যায়ে রংপুর পিবিআই তদন্তের দায়িত্ব গ্রহণ করে এসআই ওয়াহেদুজ্জামানকে তদন্তের দায়িত্ব দেন। এরপরে ইঞ্জিনিয়ার দিয়ে এটিএম বুথটির ভল্টের যন্ত্রপাতি পরীক্ষা নিরিক্ষা করে ১ লাখ ৩২ হাজার টাকা ভল্ট থেকে উদ্ধার করে ব্যাংক কর্তৃপক্ষের নিকট জমা দেয়া হয়।
রোববার দুপুরে পিবিআই এসপি জানান, এটিএম বুথে টাকা লোড দেয়ার সময় ব্যাংক কর্তৃক নির্ধারিত ২ জন পাসওয়ার্ডধারী অফিসার উপস্থিত থাকেন। তারা হলেন প্রাইম ব্যাংকের রংপুর শাখার কাস্টমাস সার্ভস অফিসার মোঃ মোস্তাফিজ, অফিসার আবু রায়হান। তারাই ব্যাংক কর্তৃক নির্ধারিত গোপন পাসওর্য়াডধারী অফিসার এবং তারাই র্দীঘদিন হতে ভল্টে টাকা লোড দিয়ে আসছেন। গত গত বছরের ১৭ জুন বিকেলে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে এটিএম বুথের কাস্টমার এর জন্য সংরক্ষিত ডিজিটাল প্যাড অকেজো হলে তা ব্যাংক কতৃপক্ষের নজরে আসে। ব্যাংকের স্থানীয় শাখা কর্মকর্তারা ঢাকা প্রধান কার্যালযে যোগাযোগ করে প্রকৌশলীদের প্রযুক্তিগতগত সহায়তা চায়। গত বছরের ৪ অক্টোবর ইঞ্জিনিয়ার ও কর্মকতারা এটিএম বুথটি মেরামত করার জন্য যুগপৎ দুটি পাসওয়ার্ড দিয়ে ভল্ট স্বাভাবিকভাবেই খুলে দেখেন যে, ভল্ট হতে ৩ টি ক্যাসেট চুরি হয়েছে। তথ্য প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করে তদন্তের একপর্যায়ে জানা যায় যে, আবু রায়হান বগুড়ায় বদলী হওয়ার পরেও তিনি গত বছরের ২০ আগস্ট পর্যন্ত প্রাইম ব্যাংক শাখায় কর্মরত ছিলেন। ১৭ জুন এটিএম বুথ বিকল হওয়ার আগ পর্যন্ত ৩ বার ভল্টে লোড দেয়া হয়। প্রথম দিন টাকা লোড দেয়ার সময় উপস্থিত ছিলেন পাসওয়ার্ড বহনকারী অফিসার মোঃ ফরহাদ ও আবু রায়হান। ২য় বার উপস্থিত ছিলেন আবু রায়হান ও ব্যাংকের ফ্যাসিলিটিজ স্টাফ মিলন মিয়া। তিনি এটিএম বুথে উপস্থিত হয়ে মোঃ মিলন মিয়া এর মোবাইল ফোন থেকে সিনিয়র অফিসার মোঃ ফরহাদ এর সাথে কথা বলে ফরহাদের নিকট রক্ষিত পাসওয়ার্ডটি নেন এবং পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে ভল্ট এর ডোর খুলে টাকা লোড দেন। সর্বশেষ ৩য় বার ভল্টে টাকা লোড করার পূর্বে অফিসার আবু রায়হান ব্যাংকের অভ্যন্তরে সিনিয়র অফিসার মোঃ ফরহাদ এর নিকট থেকে চিরকুটে পাসওয়ার্ড লিখে নিয়ে ৩০ লাখ টাকা টাকা বুথে নিয়ে যান এবং ভল্ট লোড দেন।
রংপুর পিবিআই পুলিশ সুপার এবিএম জাকির হোসেন জানান, গোপন দুটি পাসওর্য়াডই উক্ত ব্যাংকের একমাত্র অফিসার আবু রায়হান জানতেন। নিজ বদলী আদেশের সুযোগ নিয়ে তিনি তার নিকটে থাকা ২ টি গোপন পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে সুকৌশলে পূর্ব-পরিকল্পিতভাবে এটিএম বুথের ভল্টে থাকা মোট ৯ লাখ ৬৩ হাজার টাকা চুরি করেন। এই ঘটনার সাথে জড়িত আরো কেউ থাকলে তাদের গ্রেফতার ও চুরি যাওয়া টাকা উদ্ধারের চেষ্টা চলছে বলে তিনি জানান, গ্রেফতারকৃতকে আদালতের পাঠানো হয়েছে।
Leave a Reply