রিয়াজুল হক সাগর রংপুর জেলা প্রতিনিধিঃ
রংপুরের কাউনিয়ায় আজমখাঁ গ্রামে তিস্তার শাখা মানস নদীর ওপর পাকা ব্রিজটি ধসে গিয়ে পাঁচ বছর ধরে পানিতে তুলিয়ে পড়ে আছে। ব্রিজের উভয় পার্শের সংযোগ সড়কও ভেঙে যায়। দীর্ঘদিন ধরে ব্রিজটি সংস্কার না হওয়ায় ভাঙ্গা ব্রিজে নড়বড়ে সাঁকো দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলাচলে পাঁচ গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে।
এলজিইডি উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় সুত্র জানায়, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে এডিপি প্রকল্পের অর্থায়নে টেপামধুপুর ইউনিয়নের আজমখাঁ গ্রামে মানস নদীর ওপরে ১৮ ফুটের দীর্ঘ আরসিসি বক্স কালভাট নির্মাণ করা হয়। ২০১৭ সালের আগস্ট মাসের বন্যায় ব্রিজটির পশ্চিম অংশ পুরোটা ধসে গিয়ে পানিতে তলিয়ে যায় এবং ব্রিজটির উভয়পাশে সড়ক ভেঙে যায়। এরপর থেকে স্থানীয় লোকজন ভাঙ্গা ব্রিজের দুই পার্শে কাঠের সাঁকো তৈরী করে পারাপার করছে।
সরেজমিনে আজমখাঁ গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, ২০১৭ সালের বন্যায় দেবে যাওয়া ব্রিজটির একাংশ পাঁচ বছর ধরে পানিতে তলিয়ে আছে। সংযোগ সড়কও ভেঙ্গে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্থ ব্রিজের উভয় পার্শে কাঠের সাঁকো নির্মাণ করে পাচঁ গ্রামের মানুষজন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ভাঙ্গা ব্রিজ দিয়ে পারাপার করছে।
ব্রিজের পুর্বপার্শ্বে উপজেলার আজমখাঁ, গনাই, হয়বৎখাঁর গ্রামের একাংশ ও রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ, পীরগাছা উপজেলার রামসিং গ্রামের একাংশ রয়েছে। আর ব্রিজের পশ্চিমপার্শ্বে দুইটি হাট, দুইটি মাধ্যমিক বিদ্যালায়, একটি মাদ্রাসাসহ বেশকয়েকটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালায় এবং একটি ইবতেদায়ী মাদ্রাসা রয়েছে।
স্থানীয় কয়েকজন বলেন, ভাঙ্গা ব্রিজের ওপরে নড়বড়ে সাঁকো দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলাচলে পাঁচ গ্রামের কয়েক হাজার মানুষকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ঝুঁকিপুর্ন সাঁকো পারাপারে পিছলে পড়ে মোটরসাইকেল, বাইসাইকেল ও ভ্যানচালকদের নদীর পানিতে পড়ে আহত হওয়ার ঘটনাও ঘটছে। এই পথ ছাড়া আর বিকল্প কোন পথ নাই। ব্রিজটির পূর্বপার্শ্বের গ্রামের শেষ সীমান্তে তিস্তা নদী।
টেপামধুপুর ইউপি সদস্য আব্দুল ওয়াহাব বলেন, ক্ষতিগ্রস্থ ব্রিজের পুর্বপার্শ্বে গ্রামের বাসিন্দাদের উপজেলা সদরসহ হাট-বাজার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাতায়াতে এটি একমাত্র সড়ক। কিন্তু ২০১৭ সালে বন্যায় ব্রিজ ও সংযোগ সড়ক ভেঙ্গে যায়। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না হওয়ায় ব্রিজের ওই পাড়ের হাজারও মানুষদের যাতায়াতে চরম দুভোগ পোহাতে হচ্ছে।
আজমখাঁ গ্রামের বাসিন্দা নাছের আলী বলেন, ভেঙে যাওয়া ব্রিজ ও সড়ক সংস্কার না করায় নরবরে কাঠের সাঁকো দিয়ে পারাপারের সময় প্রায় নদীতে পড়ে দুর্ঘটনা ঘটছে। বিশেষ করে রোগীদের হাসপাতালে নিয়ে যেতে দুর্ভোগের শেষ থাকে না। ঘাড়ে করে কাঠের সাঁকো ও ভাঙ্গা ব্রিজ পার করে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়।
রামসিং গ্রামের বাসিন্দা আলী আকবর বলেন, এই রাস্তাটি ছাড়া শহর ও হাট-বাজারে যাতায়াতের বিকল্প কোন রাস্তা নাই।
আজমখাঁ গ্রামের কৃষক আশরাফুল ইসলাম, আব্দুল হালিম সহ বেশ কয়েকজন কৃষক বলেন, ভাঙ্গা ব্রিজের ওপর দিয়ে কোনো পণ্যবোঝাই গাড়ি পারাপার হতে পারে না। ব্রিজটি সংস্কার না হওয়ায় কৃষিপণ্য বিক্রির জন্য হাটে নিয়ে যেতে অতিরিক্ত খরচ হচ্ছে।
হয়বৎখাঁ গ্রামের বাসিন্দা শহিদুল ইসলাম বলেন, তিন উপজেলার পাঁচ গ্রামের বাসিন্দাদের যাতায়াতের একমাত্র সড়কে ব্রিজটি ধসে গিয়ে পাঁচ বছর ধরে পানিতে তলিয়ে আছে। অথচ গ্রামীণ জনপদে যোগাযোগ উন্নয়ণে ব্রিজটি সংস্কারের কোন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না।
টেপামধুপুর ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম শফি বলেন, আজমখাঁ গ্রামে ক্ষতিগ্রস্থ ব্রিজ ও সংযোগ সড়ক সংস্কার হওয়া খুবই জরুরি।
উপজেলা প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান জেমি বলেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ ব্রিজটি নতুন করে নির্মাণ করতে হবে। গত বছর বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ বেশকয়েকটি ব্রিজের প্রতিবেদন ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলে টেন্ডারের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্থ ব্রিজগুলো নির্মাণ কাজের প্রক্রিয়া শুরু করা হবে
Leave a Reply