১৬ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ।১লা আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।সোমবার

মৌলভীবাজারে ১৫ বছর ধরে গৃহবন্দি ভাই-বোন : প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি।। মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে দরিদ্র কৃষক পরিবারের দুই ভাইবোন বিরল রোগে আক্রান্ত হয়ে ১৫ বছর গৃহবন্দি রয়েছেন। এ ব্যাপারে পত্র পত্রিকার রিপোর্ট প্রকাশ পেলে কোন প্রতিকার পাওয়া যায়নি। চেহারা অবস্থা এমন হয়েছে বাইরের মানুষ দেখলে পালিয়ে যায়। আর সূর্যের আলো তারা সহ্য করতে পারে না। কমলগঞ্জ সদর ইউনিয়নের প্রত্যন্ত এলাকার উত্তর তিলকপুর গ্রামের দরিদ্র কৃষক পরিবারের দুই ভাই-বোন যথাক্রমে-মো: সিরাজুছ ছালেকিন (২০)ও মোছা: আবেদা আক্তার রিমা (১৭)। তাদের পিতা মো: ফকরুল ইসলাম (আফরুজ) ও মাতা শিরী বেগম।

জন্মের ৩ বছর পর থেকে ভাই-বোন উভয়েই অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত হয়। আক্রান্তের পর চোখের সামনে ছেলে মেয়ের এমন অবস্থা দেখে তাদের বাবা মো: ফকরুল ইসলাম (আফরুজ) তাদেরকে গ্রাম্য কবিরাজের কাছে নিয়ে যান। অন্ধবিশ্বাসের কারনে ক্রমাগত রোগটি বাড়তে থাকে। মো: সিরাজুছ ছালেকিনের মুখমন্ডল ও শরীরে রোগটি ক্রমাগত বাড়তে থেকে মারাতœক রূপ ধারন করে। মোছা: আবেদা আক্তার রিমার রোগটিও বেড়ে গিয়ে মুখ ও শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। তাদের এই অবস্থাতে ঘরের বাইরে বের হওয়া খুবই কষ্টসাধ্য। ভাই-বোন দীর্ঘদিন যাবত এই ভয়ংকর রোগের সাথে যুদ্ধ করে বেঁচে আছে। আর্থিক অস্বচ্ছলতা ও অজ্ঞতার কারণে অসহায় ফকরুল ইসলাম কোনো সুচিকিৎসা করাতে পারছেন না তাদের। ভাল কোনো ডাক্তারও দেখাতে পারেননি।

একদিকে রোগের যন্ত্রনা অন্যদিকে সংসারের অনটনে চিকিৎসার অভাবে যেন তাঁরা মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। এমনই অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করছেন বাবা মো: ফকরুল ইসলাম (আফরুজ)। আর্থিক সাহায্য চেয়ে সম্প্রতি কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে লিখিত আবেদন করা হয়েছে।

স্থানীয় ইউপি সদস্য রুপেন্দ্র কুমার সিংহ ও এলাকাবাসী সূত্রে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ৬ ভাই-বোনের মধ্যে ২য় সিরাজুছ ও রিমা ৩য়। ৬ জনের মধ্যে ২জনই বিরল রোগে আক্রান্ত আর ৪ জন সুস্থ্য। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তাদের বাবা মো: ফকরুল ইসলাম (৫০) কৃষিকাজ করে ৮ জনের সংসার চালানো তার পক্ষে খুবই কষ্টকর। এখন পর্যন্ত সরকারিভাবে কোন সহায়তা পাননি। তবে কিছুদিন পূর্বে বেসরকারিভাবে ৩ জন প্রবাসীর পক্ষ থেকে কিছু আর্থিক সহায়তা পেয়েছিল এই অসহায় পরিবার। প্রথমে সিরাজুছের মুখে একটি ক্ষতচিহ্ন ও সাদা সাদা দাগ দেখা যায়। পরে তা মারাতœক রূপ ধারন করে এবং সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে । সে তরল জাতীয় খাদ্য ছাড়া কিছুই খেতে পারে না। রিমার শরীরে ও মুখে প্রথমে কিছু সাদা সাদা দাগ ছিল । পরে তা পুরো মুখে ও শরীরে ছড়িয়ে পড়ে মারত্মক কালো রূপ ধারন করে। এখন সে আলোতে ঠিকমতো চাইতে পারে না।

তখন স্থানীয় ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলে তারা রোগটি সনাক্ত করতে পারেনি। স্থানীয়দের পরার্মশে পরবর্তীতে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কিছুদিন চিকিৎসা নেওয়ার পর ডাক্তাররা সঠিক রোগটি সনাক্ত করতে না পারায় এবং সুনিদিষ্ট কিছু না বলায় রোগাক্রান্ত ছেলে-মেয়েকে নিয়ে বাড়িতে চলে আসেন বাবা ফকরুল ইসলাম। এখন মা শিরী বেগম (৪২) ও বড় ভাই শামসুল আরেফিন (২৩) তাদের দেখাশুনা করেন। ভাইবোন দীর্ঘ ১৫ ও ১২ বছর ধরে তারা এই ভয়ংকর রোগের সঙ্গে যুদ্ধ করে বেঁচে আছে।

এ বিষয়ে রোগাক্রান্ত ছেলে-মেয়ের বাবা মো: ফকরুল ইসলাম (আফরুজ)-কে জিজ্ঞেস করলে তিনি অসহায়ের মত কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। ছেলে-মেয়েদের চিকিৎসার প্রধান সমস্যা অর্থনৈতিক বাঁধা। অভাবের সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরায় এমতাবস্থায় নিজের চোঁখের সামনে ছেলে মেয়ের আর্তনাদ দেখে যাওয়া ছাড়া আর কিছু করার নেই তার। কমলগঞ্জ ৫০ শয্যা হাসপাতালের কর্মরত চিকিৎসক ডা. সৈয়দ শওকত আলী জানান, এটি জিনগত সমস্যা হতে পারে। রোগীর চামড়ার কোষে মেলানিন না থাকায় সূর্যের আলোর অতিবেগুনী রশ্মিতে কোষের উঘঅ নষ্ট হয়ে যায়।

ক্রমাগত অতিবেগুনী রশ্মির সম্মুখীন হলে উঘঅ নষ্ট হয়ে ক্যান্সার হতে পারে। প্রাথমিকভাবে তিনি ধারনা করছেন রোগটি ঢবৎড়ফবৎসধ চরমসবহঃড়ংধস হতে পারে। এটি একটি ভয়ংকর বিরল ধরনের রোগ। ছেলে ও মেয়েটিকে সঠিক রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ অথবা পিজি হাসপাতালে পাঠানো যেতে পারে। রোগাক্রান্ত ছেলে-মেয়ের বাবা সরকারের কাছে তার ছেলে-মেয়ের চিকিৎসার জন্য আকুল আবেদন জানান। সরকার বা সমাজের বিত্তশালীরা এগিয়ে এসে যদি এই অসহায় ভাই-বোনের চিকিৎসার ভার নেন তাহলে হয়তো নতুন জীবন ফিরে পেতে পারে রোগাক্রান্ত ছালেকিন ও রিমা।

স্থানীয় কমলগঞ্জ সদর ইউপি সদস্য রুপেন্দ্র কুমার সিংহ জানান, ভয়ংকর বিরল রোগে আক্রান্ত ছেলে-মেয়েকে শুধুমাত্র টাকার অভাবে উন্নত চিকিৎসা সেবা দিতে পারছেন না দরিদ্র পিতা মো: ফকরুল ইসলাম (আফরুজ)। সম্প্রতি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে সাহায্য চেয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে একটি লিখিত আবেদন করা হয়েছে।
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আশেকুল হক জানান, বিরল রোগে আক্রান্ত ভাই-বোন এর বিষয়টি আমি আগে জানতাম না। পরিবারের পক্ষ থেকে লিখিত আবেদন করার পর জরুরী ভিত্তিতে সরকারের পক্ষ থেকে আর্থিক সাহায্যসহ সব ধরণের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

এই পোস্টটি আপনার সামাজিক মিডিয়াতে সেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রনজিৎ বর্মন শ্যামনগর(সাতক্ষীরা)প্রতিনিধি ঃ

সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলায় নীলাকাশ টুডের সম্পাদক মোঃ নুরুজ্জামানের সড়ক দূর্ঘটনায় মর্মান্তিকভাবে মৃত্যু হয়েছে।

শুক্রবার (২৬ জুলাই) রাত সাড়ে দশটায় শ্যামনগর উপজেলা সদরের নিকবর্তী গোপালপুর সড়কে কুলখালী নামক স্থানে দূর্ঘটনাটি ঘটে।

নিহতের পরিবার ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায় রাত সাড়ে দশটায় নিজ বাইসাইকেল যোগে নিজ বাড়ী উপজেলার নুরনগর ইউপির নুরনগর গ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা হন। এ সময় গোপালপুর মুক্তিযোদ্ধা সড়কে কুলখালী নামকস্থানে নির্মানাধীন বক্স কালভার্টের গর্তে সাইকেল সহ পড়ে যান। নির্মানাধীন বক্স কালভার্টের বাহিরে বের হওয়া লোহার রড তার মাথায় ছিদ্র হয়ে ঢুকে যেয়ে এক পাশ থেকে অপরপাশে বের হয়ে যায় পর স্থানীয়রা শ্যামনগর উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাঃ আনিছুর রহমান মৃত বলে ঘোষণা করেন।

শ্যামনগর প্রেসকাবের সাবেক সভাপতি আকবর কবীর বলেন কিছুদিন পূর্বে এই বক্স কালভার্ট তৈরী করতে যেয়ে একই সড়কে মোমিন মল্লিক নামে এক শ্রমিক মারা যান। তিনি আরও বলেন  নির্মানাধীন বক্স কালভার্টের  ঠিকাদার হিসাবে কাজ করছেন এস এম আবুল বাসার।

নীলাকাশ টুডের সম্পাদক মোঃ নুরুজ্জামানের মৃত্যুতে গভীর ভাবে শোক প্রকাশ করেছেন সাতক্ষীরা-৪ আসনের এমপি এস এম আতাউল হক দোলন, শ্যামনগর উপজেলা প্রেসকাবের আহবায়ক শেখ আফজালুর রহমান সহ সকল সাংবাদিকবৃন্দ, সুন্দরবন প্রেসকাবের সাংবাদিকবৃন্দ প্রমুখ।

ছবি- নিহত নীলাকাশ টুডের সম্পাদক মোঃ নুরুজ্জামান।

রনজিৎ বর্মন
তাং-২৭.৭.২৪

নীলাকাশ টুডের সম্পাদক নুরুজ্জামান সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত।

অরবিন্দ কুমার মণ্ডল, কয়রা, খুলনাঃ

খুলনার কয়রায় জনপ্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে নিরাপদ খাদ্য বিষয়ক সচেতনতামূলক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে।
১৬ জুলাই মঙ্গলবার দুপুর ১২ টায় উপজেলা পরিষদের সম্মেলন কক্ষে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ খুলনা জেলার আয়োজনে ও কয়রা উপজেলা প্রশাসনের সহযোগীতায় এ সচেতনতামূলক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুলী বিশ্বাসের সভাপতিত্বে সচেতনতামূলক সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্হিত ছিলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান জি এম মোহসিন রেজা। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্হিত ছিলেন, উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নাসিমা আলম।
এসময় আরও উপস্হিত ছিলেন, কয়রা সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এস এম বাহারুল ইসলাম, উত্তর বেদকাশী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সরদার নুরুল ইসলাম কোম্পানি, দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আছের আলী মোড়ল, মহারাজপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আবদুল্লাহ আল মাহমুদ, মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহনেওয়াজ শিকারী, বাঙ্গালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুস সামাদ গাজী, আমাদী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান জুয়েল সহ সাতটি ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যবৃন্দ।

নিরাপদ খাদ্যের মূল প্রবন্ধ উপস্হাপন করেন খুলনা জেলা নিরাপদ খাদ্য অফিসার মোঃ মোকলেছুর রহমান।

কয়রায় নিরাপদ খাদ্য বিষয়ক সচেতনতামূলক সেমিনার অনুষ্ঠিত।