স্বপ্ন মাহমুদ,সরিষাবাড়ী প্রতিনিধি:
সভ্যতার বিকাশে মানুষের জীবনযাত্রায় লেগেছে আধুনিকতার ছোঁয়া। কাঁচের গ্লাসের মধ্যে শীততাপ যন্ত্র লাগানোসহ প্রযুক্তির ব্যবহারে সেবার মান বেড়েছে সেলুনে। তারপরও টিকে আছে অবিহমান বাংলার অতি পরিচিত পিঁড়িতে বা টুলে বসে সেলুন। অবশ্যই প্রতিযোগীতায় টিকে থাকতে না পেরে অনেকেই পেশা বদলেছেন। গ্রাম-অঞ্চলের হাতে গোনা কয়েকজন এই পেশা ধরে রেখেছেন। তেমনি দুই’জন জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার পোগলদিঘা ইউনিয়নের সাইনঞ্চারপাড় গ্রামের মৃত তোফান শীলের ছেলে শ্রী সনঞ্চয় শীল (৫৬) এবং ডোয়াইল ইউনিয়নের উদনাপাড়া গ্রামের মৃত রিয়াজ উদ্দিন শীলের ছেলে মতিউর রহমান (৫২)। কম পুঁজি থাকায় আধুনিক সেলুন তৈরি করতে পারেনি তারা। সে কারনে গ্রাম-গঞ্জের হাটে বাজারের মোড়ে বসে এভাবেই জীবিকা নির্বাহ করেন তারা।
নবম শ্রেনীতে পড়ুয়া এক মেয়ে স্বর্না বিশ্বাস(১৬) ও সহধর্মিণীকে নিয়ে সংসার সনঞ্চয় নাপিতের। এদিকে মতিউর রহমানের এক ছেলে এক মেয়ে মুক্তা আক্তার (২০) ও ফরহাদ (২৫) এবং সহধর্মিণীকে নিয়ে তার সংসার। ছেলে মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন তিনি। সংসার বাঁচাতে জীবিকার তাগিদে রোদে পুড়ে নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে এই কর্ম করেই জীবনযাপন করছেন অর্ধশত বয়সী এই দুই ব্যক্তি সনঞ্চয় ও মতিউর রহমান।
গত শুক্রবার বিকালে উপজেলার ডোয়াইল ইউনিয়নের ডিগ্রীবন্দ (বাংলা-বাজারে) শ্রী সনঞ্চয় শীল ও মতিউর রহমানের শীলের কাছে তাদের এই সেলুন বিষয়ে জানতে চাইলে তারা অনেক কথাই বলেন।
শ্রী সনঞ্চয় শীল বলেন, আধুনিক সেলুন হওয়ায় টুল বা পিঁড়িতে বসে সেলুনের কাজ কমে গেছে। পিতা মরে যাওয়ার পর থেকে, বয়স যখন ৮-৯ বছর, তখন থেকে এই খুর-কেচি হাতে নিয়েছি। ৫০বছর ধরে এভাবেই কাজ করে যাচ্ছি।প্রতিদিন ২০০-২৫০টাকার মত কাজ করা যায়। অনেক সময় তাও হয়না। কি আর করার আছে অনেক টাকা খরচ করে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে’তো আর বড় সেলুন দিতে পারবো না। তাই যতটুকু সম্ভব ততটুকু দিয়েই জীবিকা নির্বাহ করছি।
সেভ করতে টুলে বসা বগারপাড় গ্রামের স্বাধীন মিয়া বলেন, কি আর করবো, আধুনিক সেলুনে বসে চুল-দাড়ি কামাতে লাগে ৮০-১০০টাকা। আর এখানে বসে কাটলে লাগে ৩০-৪০টাকা। তাই আধুনিকতার তুলনায় এখানে অনেক কম।
টুলে বসা আবুবক্কর গোবিন্দনগর গ্রামের বলেন, চুল কাটার জন্য এখানে এসেছি। এরা প্রতি হাটে এখানে চুল দাড়ি কাটার জন্য সেলুনের দোকান দেয়। বড় বড় সেলুনের তুলনায় এখানে অনেক কম টাকায় চুল কাটা যায়।
অপরদিকে মতিউর রহমান শীল বলেন, ফুটপাতের গ্রাম-গঞ্জের হাটে বাজারে বসে এভাবেই চুল-দাড়ি কামিয়ে পেটের তাগিদে দিন পার করছি। মানুষ এখন চক’চকা নয়া জীবন বুঝে গেছে। তাই উন্নত মানে চেয়ার, এসি করা সেলুনে বসে চুল-দাড়ি কাটে। আমাদের এই সেলুন-আয়না ছাড়া, ফ্রেস ফরম ক্রীম ছাড়া, সাধারণ টুলে বসে মানুষ আর চুল দাড়ি কাটতে চায়না। তবু গ্রামের হাট-বাজারে,পাড়ার মোড়ে মোড়ে ঘুরের ঘুরে ১৫০-২০০টাকা পর্যন্ত কাজ করে পেটের ভাত জোগাই।
Leave a Reply