ইমরান হাসান বুলবুল,ত্রিশাল(ময়মনসিংহ)প্রতিনিধিঃ
শতভাগ বিদ্যুতায়নের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে যখন দেশের প্রতিটি প্রান্তে পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ ও সেবা প্রদানের কথা বলা হচ্ছে ঠিক তখনই দফায় দফায় লোডশেডিংয়ে বিপর্যস্ত ত্রিশালবাসী। ঘনঘন লোডশেডিং নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে দাড়িঁয়েছে। যার প্রভাব পড়ছে অফিস-আদালত, কলকারখানা, বাসা-বাড়ী, শিক্ষাথীসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে। উপজেলার পৌরসভার ৯টি ওর্য়াডসহ বিভিন্ন ই্উনিয়নে বেশকিছু এলাকায় বিদ্যুৎ বিভ্রাট তীব্র আকার ধারণ করেছে। এতে বিদ্যুৎ গ্রাহকদের মাঝে দেখা দিয়েছে চরম অসন্তোষ। বিশেষ করে পৌর এলাকায় ঘন ঘন বিদ্যুৎ যাওয়া-আসা এখন নিত্যদিনের ঘটনা। বিদ্যুৎ না খাকায় ৪নং পৌর এলাকার নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী জিসান জানান করোনা কালীন সময়ে দীর্ঘ ১৮মাস পর স্কুল খোলা হলেও তীব্র গরমে বিদ্যুৎ না থাকায় স্কুলের ক্লাস ভালে ভাবে করা যাচ্ছে না।
কখনো ঘোষণা দিয়ে, আবার কখনো ঘোষণা ছাড়াই লাইন সংস্কারের নামে দিনে ও রাতের অধিকাংশ সময় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখছে কর্তৃপক্ষ। আকাশে সামান্য মেঘ দেখা দিলে কিংবা বৃষ্টি হলে তো কথায় নেই কয়েক ঘন্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবারহ বন্ধ থাকে। এভাবেই দিনে১২-১৫ আর রাতে ৮-১০বার লোডশেডিংয়ের শিকার হচ্ছে উপজেলাবাসী।
কয়েক মাস ধরে এমন দুর্ভোগের শিকার হলেও কোনো প্রতিকার পাচ্ছে না ত্রিশাল বিদ্যুৎ গ্রাহকরা। বিশেষ করে গত এক সপ্তাহে বিদ্যুতের এ সমস্যা তীব্র আকার ধারণ করেছে বলে জানান স্থানীয়রা। বিদুতের এ ভেল্কিবাজিতে অতিষ্ঠ সাধারণ মানুষ। রাতের বেলা বিদ্যুৎ না থাকায় ফিশারিজ এলাকায় প্রায় ঘটছে মাছ চুরির মতো ঘটনা। শুধু তাই নয়, রেণু পোনা মাছে অক্্িরজেন প্রয়োগ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে বেণুমাছ চাষীদের। মারাত্মক দুর্ভোগ আর সমস্যার প্রতিকার চাইতে বিদ্যুৎ অফিসের নম্বরের কল দিয়েও সেবা পাচ্ছেন না তারা। প্রায় সময় ফোন কল রিসিভ করে না কর্তৃপক্ষ, এমটিই বলেছেন ভুক্তভোগীরা।
খোঁজ নিয়ে যানা যায়, উপজেলার বগারবাজার, কালিরবাজার, বৈলর, বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা সহ পৌর ৯টি ওয়ার্ডে ৩-৪ঘন্টা লোডশেডিং হচ্ছে। ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে নষ্ট হচ্ছে ফ্রিজ, টিভি, ফ্যানসহ বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি। এছাড়া সংস্কারের নামে বিদ্যুৎ সরবারহ বন্ধ রাখায় বাড়ছে ভোগান্তি। এতে করে বিদ্যুৎ খাতের সুফল ভোগ করা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ত্রিশালের মানুষ।
৭নং পৌরওয়ার্ডের বাসিন্দা সাবরি খালেক জানান, কিছুদিন যাবত ভোরে ঘুম ভাঙ্গে লোডশেডিং জন্যে। বিদ্যুৎ বিভ্রাটের জন্যে সকালে মসজিদে নামায পড়তেও মুসল্লিদের খুব কষ্ট হয়।
৮নং পৌরওয়ার্ডের তাসলিমা জানান, ছোট বাবুর গরমের জন্যে কান্না কাটি করছিল তাই বাহিরের বাতাসের জন্যে জানালা খোলা রেখেছিলা । কখন যে ঘুমিয়ে গেছে খোজ পাইনি এই ফাকে আমাদের দুইটি মোবাইল চুরি হয়ে গেছে। এখন এই দায়ী ভার কে নেবে?
বৈলর ইউনিয়নের বাসিন্দা জসিম উদ্দিন বলেন, দিনে ও রাতে কতবার বিদ্যুৎ যায় তার কোনো হিসাব নেই। আর যখন আসে মোটর ছেড়ে পানি উঠানো যায় না, একেবারে লো-ভোল্টেজ থাকে। সব মিলিয়ে বাজে একটা অবস্থা।
মাহমুদুর রহমান সূরুজ জানান, ত্রিশাল বিদ্যুৎ অফিসের প্রধানতো খুবই ক্ষমতাধর মানুষ। উনিতো ধরাকে সরাজান ভাবেন। বিদ্যুৎ সেবায় বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে ত্রিশালের মানুষ বেশি অবহেলিত।
পৌর এলাকার মিল ব্যবসায়ী গোলাম মোস্তফা বলেন, মিনিটে মিনিটে বিদ্যুৎ মিসকল দেয়। দোকানদাররা ঠিকমত ব্যবসা করতে পারছেন না। বিদ্যুৎ চলে যেলেই দোকান অন্ধকার, গরমে বসে থাকা যায় না। ধান, চাল, মসলা ভাঙ্গানো মেশিন বার বার বন্ধ হয়ে যায়। এ কারণে শারীরিক কষ্টের পাশাপাশি নষ্ট হচ্ছে অনেক মূল্যবান যন্ত্রাংশ। এই গরমে বিদ্যুৎ-সমস্যা কবে নাগাদ সমাধান হবে কে জানে?
ত্রিশাল উপজেলার বিদ্যুৎ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী এবিএম ফারুক হোসেন বলেন, ময়মনসিংহ শহরের কেওয়াটখালি বিদ্যুৎ উৎপন্ন কেদ্রে সমস্যার ফলে আমরা পাশের উপজেলা ভালুকা থেকে তিন দিন বিদ্যুৎ এনে সরবরাহ করেছি। ত্রিশালে ১৮ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা নিয়মিত পূরণ হচ্ছে। পিডিবির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আন্তরিক রয়েছেন।
Leave a Reply