১৪ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ।৩০শে পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।মঙ্গলবার

বাঘাইছড়িতে বিদ্যুতের ভেল্কিবাজিঃ গরমে অতিষ্ট জনজীবন।

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

মোঃমহিউদ্দিন বাঘাইছড়ি,প্রতিনিধিঃ-

 

রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়িতে বিদ্যুতের ভেল্কিবাজিতে গ্রাহকদের ভোগান্তি চরম পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে। একদিকে তাপদাহে ভ্যাপসা গরম, অপরদিকে ঘন ঘন লোডশেডিং এর সাথে লো ভোল্টেজ জনজীবনে যেন নাভিশ্বাস উঠেছে। সরকার কর্তৃক ঘোষিত দেশব্যাপী বিদ্যুতের ঘাটতি নেই বললেও এর বিপরীতে বাঘাইছড়ির বাস্তব চিত্র ভিন্ন। তবে কয়েক দিনের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন মারিশ্যা বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্র।

 

সূত্রে জানাযায়, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল হওয়া সত্ত্বেও যোগাযোগ ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়া অত্র উপজেলার মানুষের কথা বিবেচনায় ১১ হাজার ( টু-পেইজ) ভোল্টেজ বৈদ্যুতিক লাইনকে, (ফোর-পেইজ) ৩৩ হাজার কেভি সাব-ষ্টেশন বিদ্যুৎ কেন্দ্রে উন্নত করেন বর্তমান সরকার।

 

জানা যায়, বাঘাইছড়িতে সর্বপ্রথম বিদ্যুৎ সংযোগ স্থাপন করে চট্রগ্রামের হাটহাজারী জিরো মাইল বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে, বাঘাইছড়ি থেকে চট্রগ্রামের হাটহাজারী বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দুরত্ব বেশি ও গ্রাহক হায়রানীর দরুন সরকার ২০১৬ সালে শেষের দিকে বাঘাইছড়ি উপজেলাকে ৩৩ হাজার কেভি ভোল্টের (ফোর ফেইজ) লাইনের সাব-ষ্টেশনে উন্নত করেন রাঙামাটির কাপ্তাই জল বিদ্যুৎ কেন্দ্রস্থলে থেকে। বর্তমানে কাপ্তাই জল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সাথে সংযুক্ত পূর্বক খাগড়াছড়ি ঠাকুরছড়া স্থলাভিষক্ত বিদ্যুৎ বিতরণ কেন্দ্র থেকে দীঘিনালা উপজেলায় ৩৩ কেভি বিদ্যুৎ সাব-ষ্টেশন ও দীঘিনালা বিদ্যুৎ সাব-ষ্টেশন থেকে বাঘাইছড়ি উপজেলায় ৩৩ হাজার কেভি বিদ্যুৎ লাইন সংযোগ স্থাপন করা হয়। বাঘাইছড়ি উপজেলাটি পাহাড়ের আকাঁবাকা ও সুউচ্চ পাহাড়ি জনপথ হওয়ায়, বাঘাইছড়ি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বিতরণ ও বৈদ্যুতিক লাইন নিয়নন্ত্রণ রাখতে দীঘিনালা বিদ্যুৎ সাব ষ্টেশনে একটি রিডিং মিটার ও ১টি ফিটার সুইচ বসানো হয়েছে ।

 

মারিশ্যা বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্রে লোডশেডিংয়ের কারণ জানতে চাইলে,তার দোষ চাপিয়ে দেওয়া হয় দীঘিনালা বিদ্যুৎ বিভাগের উপর, অথচ দীঘিনালা বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে এ ব্যাপারে কিছুই জানেনা, মারিশ্যা বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে যদি বলা হয় ফিটার সুইচ বন্ধ রাখতে ঠিক তখন তারা এই দায়িত্ব টুকু পালন করে বলে জানা যায়।

 

এদিকে বাঘাইছড়ি উপজেলার আওতায় প্রায় দেড় লক্ষ মানুষের বসবাস, এ উপজেলাতে পাঁচ হাজার আটশত এর অধিক বৈধ বিদ্যুৎ গ্রহক রয়েছে, বিদ্যুতের ভেল্কিবাজিতে অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেছে সংশ্লিষ্ট গ্রাহকগণ। এই এলাকায় বিদ্যুৎ এই আসে এই যায় অবস্থায় রয়েছে, বিদ্যুতের এই ভেল্কিবাজিতে জনমনে চরম অসন্তোষ ও ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। মাঝে মাঝে বিদ্যুতের দেখা মিললেও লো ভোল্টেজের কারণে ফ্রিজ, খাবারের পানি ও গৃহস্থালির প্রয়োজনে বৈদ্যুতিক মোটর কিংবা কমপ্রেসার চালানো একেবারেই অসম্ভবপর হয়ে উঠেছে। বেশ কিছুদিন ধরে এই ভোগান্তির মাত্রা আরো প্রকট আকার ধারণ করেছে। কি রাত, কি দিন, বিদ্যুৎ বিভ্রাট যেন লেগেই আছে।

 

ভুক্তভোগী মোঃ শরিফুল ইসলাম সবুজ বলেন, আকাশে মেঘ করলে লোডশেডিং, বৃষ্টির দোহায় দিয়েই বৃষ্টির সময় বিদ্যুৎ নেই, আবার দিনের বেলায় গাছ কাটার নাম করে বিদ্যুৎ বন্ধ, যেদিন সব কিছু ভালো থাকে সে দিন প্রতি ঘন্টায় একবার হলেও লোডশেডিং দিতে হয় কেন।

আমি বাঘাইছড়ির বিদ্যুৎ অফিসে কর্মকর্তাদের কাজের অবহেলাকে এর জন্য দায়ী করছি।

 

আরেক ভুক্তভোগী মোঃ সাইফুল ইসলাম সুজন বলেন, বাঘাইছড়ির বৈদ্যুতিক লোডশেডিং নিয়ে যখন জনসাধারণ বাঘাইছড়ি বিদ্যুৎ অফিসে কল দিয়ে লোডশেডিংয়ের কারণ জানতে চান তখনই বরাবর বলা হয় খাগড়াছড়ি বা দীঘিনালা থেকে লাইন অফ করা হয়েছে। খবর নিয়ে দেখা যায় খাগড়াছড়ি, দীঘিনালা বিদ্যুৎ ঠিকই আছে বাট বাঘাইছড়ির বিদ্যুৎ কোথায় লুকিয়ে আছে। এর দায়বার সম্পূর্ণ বাঘাইছড়ি বিদ্যুৎ অফিসের। নিজেদের গাফিলতির কারণে কষ্ট পেতে হয় সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সর্ব স্থরের জনগণকে। একটু আবহাওয়া খারাপ হলেই বাঘাইছড়ি বিদ্যুৎ বিভাগ জেনে জান যে যেকোনো সময় বড় ধরনের দূর্ঘটনা ঘটে যাবে তাই অনিদিষ্ট সময়ের জন্য বিদ্যুৎ অফ করে দেন। মাঝে মধ্যে মনে হয় লাইন অফ করে কর্মকর্তা সহ অফিস স্টাফরা যে যার বাসায় চলে যান। বাঘাইছড়ি বিদ্যুৎ যাওয়া আসা নিয়ে , ৬মাসে, ৯মাসে একবার নোটিশ পাওয়া যায়। যদিও নোটিশে উল্লেখ থাকে (সকাল ৮ থেকে বিকাল ৫)টা পর্যন্ত গাছ কাটা হবে। কিন্তু দেখা যায় ৫ টা গড়িয়ে ৬টা,৭টা বেজে যায়, তাও সেই কাঙ্ক্ষিত ৫টা আসে না, বাঘাইছড়ি বাসী এই ভোগান্তি থেকে মুক্তি চায়।

 

ভুক্তভোগী রেজাউল করিম বলেন, বাঘাইছড়ি উপজেলায় বিদ্যুতের ঘাটতি পূরণের লক্ষ্যে ১১ হাজার ভোল্ট থেকে বাড়িয়ে ২১ হাজার ভোল্ট করা হয়েছে! কিন্তু সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ কোনভাবেই কমেনি। লোডশেডিং যেভাবে শুরু হয়েছে আমার মনে হয় বাঘাইছড়ি উপজেলার ইতিহাসে এই বছরটাই সকল রেকর্ড ভেঙ্গেছে। হাসপাতালে একাধিক শ্বাসকষ্টের রোগি আছে,লোডশেডিং এর কারনে তারা বিভিন্ন স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সব মিলিয়ে এক অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এখন সাধারণ জনগন যদি অনাঙ্ক্ষিত কোন কিছু ঘটিয়ে ফেলে তবে এর দায়ভার কে নিবে?

 

বাঘাইছড়ি বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের আবাসিক প্রকৌশলী (আর ই) সুগত চাকমার সাথে কয়েকবার চেষ্টার পর ফোন রিসিভ করলে, লোডশেডিংয়ের বেপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা কোন লোডশেডিং না, লাইনের সমস্যা বলে ফোন কেটে দেয়।

এই পোস্টটি আপনার সামাজিক মিডিয়াতে সেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রনজিৎ বর্মন শ্যামনগর(সাতক্ষীরা)প্রতিনিধি ঃ

সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলায় নীলাকাশ টুডের সম্পাদক মোঃ নুরুজ্জামানের সড়ক দূর্ঘটনায় মর্মান্তিকভাবে মৃত্যু হয়েছে।

শুক্রবার (২৬ জুলাই) রাত সাড়ে দশটায় শ্যামনগর উপজেলা সদরের নিকবর্তী গোপালপুর সড়কে কুলখালী নামক স্থানে দূর্ঘটনাটি ঘটে।

নিহতের পরিবার ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায় রাত সাড়ে দশটায় নিজ বাইসাইকেল যোগে নিজ বাড়ী উপজেলার নুরনগর ইউপির নুরনগর গ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা হন। এ সময় গোপালপুর মুক্তিযোদ্ধা সড়কে কুলখালী নামকস্থানে নির্মানাধীন বক্স কালভার্টের গর্তে সাইকেল সহ পড়ে যান। নির্মানাধীন বক্স কালভার্টের বাহিরে বের হওয়া লোহার রড তার মাথায় ছিদ্র হয়ে ঢুকে যেয়ে এক পাশ থেকে অপরপাশে বের হয়ে যায় পর স্থানীয়রা শ্যামনগর উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাঃ আনিছুর রহমান মৃত বলে ঘোষণা করেন।

শ্যামনগর প্রেসকাবের সাবেক সভাপতি আকবর কবীর বলেন কিছুদিন পূর্বে এই বক্স কালভার্ট তৈরী করতে যেয়ে একই সড়কে মোমিন মল্লিক নামে এক শ্রমিক মারা যান। তিনি আরও বলেন  নির্মানাধীন বক্স কালভার্টের  ঠিকাদার হিসাবে কাজ করছেন এস এম আবুল বাসার।

নীলাকাশ টুডের সম্পাদক মোঃ নুরুজ্জামানের মৃত্যুতে গভীর ভাবে শোক প্রকাশ করেছেন সাতক্ষীরা-৪ আসনের এমপি এস এম আতাউল হক দোলন, শ্যামনগর উপজেলা প্রেসকাবের আহবায়ক শেখ আফজালুর রহমান সহ সকল সাংবাদিকবৃন্দ, সুন্দরবন প্রেসকাবের সাংবাদিকবৃন্দ প্রমুখ।

ছবি- নিহত নীলাকাশ টুডের সম্পাদক মোঃ নুরুজ্জামান।

রনজিৎ বর্মন
তাং-২৭.৭.২৪

নীলাকাশ টুডের সম্পাদক নুরুজ্জামান সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত।