রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি।।
রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অংসুইপ্রু চৌধুরী বলেন,১০বছর আগে পার্বত্য চট্টগ্রামের শহরসহ প্রত্যন্ত অঞ্চলে পানির জন্য হাহাকার ছিল, কিন্তু অন্যান্য জেলার তুলনায় পার্বত্য এলাকার লোকজন কলসি নিয়ে আন্দোলন করতে হয়নি। বর্তমানে জনস্বাস্থ্য বিভাগের মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের ব্যবস্থা হচ্ছে। পূর্বে পাহাড় জঙ্গলে, ছড়াতে এবং ঝিড়িতে পর্যাপ্ত পানি ছিলো, এখন নেই। সব হারাতে বসেছি। তিনি আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষ কষ্ট পেলেও প্রতিবাদ করেনা, সমস্যা হলেও চুপ থাকে। এটাই এখানকার মানুষের বৈশিষ্ট্য। প্রতিবাদ করতে জানেনা, চাইতে জানেনা, বলতে চাইনা এধরনের মানুষের পক্ষে জনপ্রতিনিধিদেরকেই তাদের মঙ্গলের জন্য সোচ্চার হতে হবে। এ প্রকল্পটি যাতে এখানেই শেষ না হয়ে আবার ফিরে আসে এ ব্যবস্থা করতে হবে। পরবর্তী প্রজন্মের জন্য গুরুত্ব সহকারে দেখতে হবে। সচেতন এবং আন্তরিক থাকতে হবে এবং জনগণকে সচেতন করতে হবে। এভাবে আগামী প্রজন্মকে একটি সুন্দর পৃথিবী আমরা উপহার হিসাবে দিয়ে যেতে পারবো।
বৃহস্পতিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সকালে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত পার্বত্য চট্টগ্রাম জলবায়ু সহনশীল প্রকল্পের অভিজ্ঞতা বিনিময় শীর্ষক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এসব কথা বলেন।
রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য রেমলিয়ানা পাংখোয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কর্মশালায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন পরিষদের জনসংযোগ কর্মকর্তা এবং প্রকল্পের ফোকাল পার্সন অরুনেন্দু ত্রিপুরা।
সভায় উপস্থিত বক্তারা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের ফলে পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রতিনিয়ত নানা ক্ষতির প্রভাব লক্ষিত হচ্ছে। এছাড়াও অতিরিক্ত জনসংখ্যার চাপ এবং ব্যবসায়িক কারণে প্রতিদিন পাবর্ত্য চট্টগ্রামের বন ও বনজ সম্পদ উজাড় হয়ে যাচ্ছে। ফলে পানির অভাব, মাটি ক্ষয়, ভূমিধস, অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, আকষ্মিক বন্যার প্রতিনিয়ত সংগঠিত হচ্ছে। যার কারণে এই পার্বত্য এলাকায় পরিবেশগত ভারসাম্যহীনতা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে তাপমাত্রা অস্বাভাবিক বৃদ্ধি, বৃষ্টিপাতের ধরণ ও মাত্রায় পরিবর্তন হচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রাকৃতিক বন চরমভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার কারণে পার্বত্য এলাকার জলবিভাজিকা, জনগোষ্ঠীর জীবন ও জীবিকার উপর বিরুপ প্রভাব লক্ষণীয় মাত্রায় দেখা যাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তন জনিত এ ধরনের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষার জন্য ” পার্বত্য চট্টগ্রাম জলবায়ু সহনশীল প্রকল্প (সিসিআরপি) ” নামক একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।
পরে সিসিআরপি প্রকল্প, কমিউনিটি কর্তৃক চিহ্নিত বিপদাপন্নতা, স্থানীয় সহনশীল পরিকল্পনা, কমিউনিটি অভিযোজন বিষয়ক সক্ষমতা, পার্বত্য অঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তন জনিত খারাপ প্রভাব সমূহ, ভবিষ্যত পরিকল্পনা, চ্যালেঞ্জ এবং পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ বিষয়ক পাওয়ারপয়েন্ট প্রেজেন্টেশানের মাধ্যমে উপস্থাপনা করা হয়।
কর্মশালায় জেলা পরিষদ সদস্য অংসুইছাইন চৌধুরী, জাতীয় মানবধিকার কমিশনের সাবেক সদস্য নিরূপা দেওয়ান, বিলাইছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান বীরোত্তম তঞ্চঙ্গ্যা, বরকল উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বিধান চাকমা, জুরাছড়ি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সুরেশ কুমার চাকমা, সদর উপজেলা প্যানেল মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নাসরিন ইসলাম, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কৃষি প্রকৌশলী দেবাশীষ চাকমা, গ্রীণহিলের চেয়ারপার্সন টুকু তালুকদার, প্রোগ্রেসিভ এর নির্বাহী পরিচালক সুচরিতা চাকমা, আইনজীবি সুস্মিতা চাকমা, ২নং বনযোগীছড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সন্তোষ বিকাশ চাকমা, পূর্ব ফুরোমন এলাকার কোষাধ্যক্ষ চিনু চাকমা, বরকলের হাজাছড়া সিআরসি সভাপতি প্রভাত মোহন চাকমা, বরকলের বামে ভূষণছড়া সিআরসি সভাপতি কমলকৃঞ্চ চাকমা, রাঙ্গামাটি সদরের বসন্তমোন সিআরসি সভাপতি অনিল বিকাশ চাকমা, কোষাধ্যক্ষ সুমিরা চাকমা, সদস্য রেবতি রঞ্জন চাকমা, বাঙ্গালকাটা ও চরবেক ছড়া সিআরসি সম্পাদক হলধর চাকমা, তিনকুনিয়া সিআরসি সদস্য নতুন বালা তঞ্চঙ্গ্যা, জুরাছড়ির তন্যাবিছড়া সিআরসি সম্পাদক মিতালী চাকমা, জুরাছড়ির ধুলকল ও পাচগতমা ছড়া সিআরসি সভাপতি সন্তোষ বিকাশ চাকমা, সদরের পূর্ব ফুরোমন সিআরসি সহসভাপতি বিজয় কুমার কার্বারী, সদরের সাপছড়ি সিআরসি পূর্ব ফুরোমন সিআরসি সাধারণ সম্পাদক চন্দ্রমনি চাকমা, সদরের সাপছড়ি ইউনিয়নের মহিলা মেম্বার সুমিত্রা চাকমা, এসআইডির প্রোগ্রাম অফিসার এ কে এম আজাদ, উপজেলা ফ্যাসিলিটেটর জয় খীসা, ৩নং ফারুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিদ্যালাল তঞ্চঙ্গ্যা, ১নং বিলাইছড়ি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সুনীল কান্তি দেওয়ান, ৩নং সাপছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান মৃনাল কান্তি চাকমা, ৬নং বালুখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিজয়গিরি চাকমা, সিএইচটি ভিসিএফ নেটওয়ার্কের সভাপতি থোয়াই অং মারমা, সদরের পূর্ব ফুরোমোন সিআরসি সভাপতি নিরু চাকমার চাকমা, আশিকা ডেভেলাপমেন্ট এসোসিয়েট কক্সি তালুকদার উপস্থিত ছিলেন।
জেলা পরিষদ সম্মেলন কক্ষে আলোচনা সভা শেষে রাঙ্গামাটি সদর উপজেলার সাপছড়ি ইউনিয়নের এটিআই এলাকা বোধিপুর মোনপাড়া ও পূর্ব ফুরোমোন সিআরসি প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করেন। ফুরমোন পাহাড়ে গিয়ে সিআরসি কর্তৃক জলবায়ু বিপদাপন্নতা বিষয়ক অভিজ্ঞতা বিনিময় এবং কিভাবে তারা খাপ খাওয়াবে, আর্থিকভাবে তারা কিভাবে লাভবান হচ্ছে এ বিষয়ে উন্মুক্ত আলোচনার মাধ্যমে কর্মশালা সম্পন্ন হয়।
Leave a Reply