মোঃ মাসুদ রানা রাশেদঃ
শীতের আগমনী বার্তায় ও বর্ষার শেষে হঠাৎ করে তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমা ৭০সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়। এ কারণে লালমনিরহাটের ৫টি উপজেলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এর সঠিক হিসাব বের করা সম্ভব না হলেও বিভিন্ন দপ্তরের প্রাথমিক জরিপ সূত্রে জানাযায়, ক্ষতির পরিমান ২০০কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। এ বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে জেলার হাতীবান্ধা উপজেলায়। ওই উপজেলার গডিমারী ইউনিয়নের অধিকাংশ কাঁচা-পাকা সড়ক ভেঙে গেছে। অধিকাংশ জমির ফসল পানিতে ডুবে পচে নষ্ট হয়ে গেছে। ক্ষতি-গ্রস্তদের পুর্ণবাসনের কাজ ইতিমধ্যেই শুরু করেছেন সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পুর্ণবাসন করতে কৃষি ও কৃষকদের ঘিরে সরকার নানা পরিকল্পনা গ্রহণ করবে- এমনটি দাবি তুলেছেন তিস্তাপাড়ের ক্ষতিগ্রস্ত-বানভাসি লোকজন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, হঠাৎ বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে কৃষিতে। হাজার হাজার হেক্টর জমির পাকা আমন ধান, আলু, ভুট্টা ও পেঁয়াজ ক্ষেত পানিতে ডুবে নষ্ট হয়ে পচে গেছে।
হাতীবান্ধা উপজেলার চর গড্ডিমারী গ্রামের সাইফুল ইসলাম বলেন, আমার ৬ বিঘা জমির পাকা ধান ডুবে পচে নষ্ট হয়ে গেছে। আমার ছোট ভাইয়ের ১১বিঘা জমির ভুট্টা ও আলু নষ্ট হয়ে গেছে। পাশের বাড়ির একজনের ২৩বস্তা সার বন্যার পানিতে ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে। বন্যায় তিস্তা তীরবর্তী এলাকাগুলোর কাচা-পাকা সড়কগুলো ভেঙে যাওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে এবং লোকজন চলাচল চরম দুর্ভোগে পড়েছে।
লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অডিধদপ্তরের উপ-পরিচালক শামীম আশরাফ বলেন, বন্যার কারণে জেলায় মোট ৩হাজার ৩৮০হেক্টর পানিতে ডুবে গেছে। এরমধ্যে ২ হাজার ৯৫৫ হেক্টর আমন ধান। পাশাপাশি ভুট্টা- ১৯২ হেক্টর, বাদাম ৫২ হেক্টর , আলু ৬৪ হেক্টর, মাশকলাই ৫ হেক্টর, মরিচ- ৫ হেক্টর, পেঁয়াজ ১৬ হেক্টর , সবজি ৯১ হেক্টর জমি পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। এতে ক্ষতির পরিমান প্রায় ৩০ কোটি টাকা।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ ফারুকুল ইসলাম জানান, হঠাৎ বন্যায় প্রায় ১১৭ হেক্টর জমির ক্ষতিগ্রস্থ পুকুরের সংখ্যা ৯৩৬ টি। এরমধ্যে মাছ ২২৪ মেট্রিক টান, পোনা-৩৫ লক্ষ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ফলে মাছ ও পোনা মিলে আনুমানিক ক্ষতি প্রায় ৪ কোটি টাকা।
এলজিইডি নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফ আলী বলেন, ৯০ কিলোমিটার পাকা রাস্তাসহ বেশ কয়েকটি সেতু নষ্ট হয়ে গেছে। এতে ক্ষতির পরিমান প্রায় ৩৫ কোটি টাকা। পানি উন্নয়নের বোর্ডের দাবি, এ বন্যায় তাদের ক্ষতির পরিমান ২০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। অব-কাঠামোগত ক্ষয়ক্ষতির পরিমান প্রায় ৭৫ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে ধারণা করা হচ্ছে, এ বন্যায় ক্ষতির পরিমান ২০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক আবু জাফর বলেন, এবারের বন্যায় জেলার অপূরনীয় ক্ষতি হয়েছে, ক্ষতিগ্রস্তদের পূর্ণবাসনের জন্য তালিকা করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
Leave a Reply