সরদার বাদশা,নিজস্ব প্রতিনিধি ।
প্রতি বছরের মতো ডুমুরিয়া অঞ্চলের গাছিরা খেজুরের রস আহরণের জন্য তোড়জোড় শুরু করেছে । গাছিরা খেজুর গাছ থেকে রস বের করার জন্য শুরু করেছেন প্রাথমিক পরিচর্যা । স্থানীয় ভাষায় এটাকে বলা হয় গাছ তোলা । এক সপ্তাহ পরই আবার চাছ দিয়ে নলি , গুজা লাগানো হবে । খেজুর গাছ থেকে রস বের করতে তিন সপ্তাহ পেরিয়ে চতুর্থ সপ্তাহে রস আহরণ শুরু হয় । গ্রাম বাংলায় এখন চোখে পড়ছে খেজুর গাছ তোলা দৃশ্য । গাছিরা এখন মাঠে মাঠে মহা ব্যস্ত সময় পার করছে । আর কিছুদিন পরই গৌরব আর ঐতিহ্যের প্রতীক মধুবৃক্ষ থেকে সুমধুর রস বের করে গ্রামের ঘরে ঘরে শুরু হবে নতুন গুড় , পাটালি তৈরির মহা উৎসব । গ্রামে গ্রামে খেজুরের রস জ্বালিয়ে পিঠা , পায়েস , মুড়ি মুড়কি নানা রকমের মুখরোচক খাবার তৈরির করার ধুম পড়বে । আর রসে ভেজা কাচি পোড়া পিঠার ( চিতই পিঠা ) স্বাদই আলাদা । নলেন গুড় , ঝোলা গুড় ও দানা গুড়ের সুমিষ্ট গন্ধেই যেন নাগ জুড়িয়ে যায় । রসনা তৃপ্তিতে এর জুড়ি নেই । নলেন গুড় পাটালির মধ্যে নারিকেল কোরা ও তিল ভাজা মিশালে আরো সুস্বাদু লাগে। খেজুরের গুড় থেকে ‘ ব্রাউন সুগার ‘ উৎপাদনেরও সুনাম রয়েছে । অবশ্য খেজুর গাছ অন্যান্য গাছের মতো বপন করা বা সার মাটি দিতে হয় না । প্রাকৃতিক নিয়মেই মাঠে পড়ে থাকা খেজুরের আঁটি ( বিচি ) থেকে চারা জন্মায় । সৃষ্টি হয় খেজুরের বাগান । তবে খেজুর গাছ ইট ভাটার জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ায় বেশ আগে থেকে এ অঞ্চলে গুড় , পাটালির উৎপাদন বহুলাংশে কমে গেছে । এখন আর আগের মতো মাঠ ভরা খেজুর বাগানও নেই । নেই মাঠে মাঠে রস জ্বালানো বান ( চুলো ) । যা আছে তা নিতান্তই কম । গুড় ও পাটালি পাওয়া দুষ্কর । এ মৌসুমে যা তৈরি হয় তা রীতিমতো কাড়াকাড়ি শুরু হয়ে যায়। আবহমান কাল থেকে এই বাংলায় নবান্নের উৎসব পালনে খেজুর গুড়ের কদর বেশি । উৎসব পালনে ও খেজুর গুড়ের কদর বেশি । চুকনগর অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে , গাছিরা গাছ পরিষ্কার বা তোলা চাচা করার জন্য গাছি দা ও দড়ি তৈরিসহ ভাড় ( মাটির ঠিলে ) ক্রয় ও রস জ্বালানো জায়গা ঠিক করাসহ বিভিন্ন কাজে রয়েছে ব্যতিব্যস্ত । চুকনগর পশ্চিমপাড়া নুর আলী সরদার ও আবুল হোসেন জানান গাছ কাটা , রস জ্বালানো ও গুড় – পাটালি তৈরির উপকরণের মূল্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ায় এবার অন্য বছর গুলোর তুলনায় গুড় পাটালির দাম বেশি হবে । খেজুর গাছ তোলার গাছি আমজাদ মোড়ল ও মালতিয়া আফসার সরদার গাছিরা বলেন , শীত চলে আসছে । এখন খেজুর গাছ তোলার সময় । খেজুর রসের গুড় – পাটালি তৈরি করে চুকনগর, আঠারো মাইলসহ বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করা হয় । এখান থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে চলে যায় । এতে আমরা অনেক লাভোবান হয়ে থাকি । কিন্তু ইট ভাটায় খেজুর গাছ মেরে জ্বালাানি কাজে ব্যবহার করার কারণে এ ঐতিহ্য বিলীন হতে চলেছে । সরকারিভাবে উদ্যোগ না নিলে অনেক ক্ষতিগ্রস্থ হতে হবে । এ অঞ্চলে খেজুর গাছের সংখ্যা কমে যাওয়ায় ঐতিহ্য ধরে রাখতে সরকারের বন বিভাগের উদ্যোগে গত কয়েক বছর আগে খেজুর গাছ রোপণের কাজ শুরু করেছে । উপজেলার জীববৈচিত্র সংরক্ষণ ও প্রাকৃতিক পরিবেশ উন্নয়ন ‘ প্রকল্পের আওতায় এ অঞ্চলে রোপিত হয়েছে খেজুর গাছের হাজার হাজার আটি । দেশি জাতের সাথে পরীক্ষামূলকভাবে আরব দেশীয় খেজুরের চারাও রোপণ করা হয়েছে বলে বন বিভাগ জানিয়েছে । তবে ইট ভাটায় খেজুর গাছ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার সরকারিভাবে নিষিদ্ধ না করলে এক সময় খেজুর গাছ পরবর্তী প্রজন্মের কাছে শুধু আরব্য উপনাসের গল্পে পরিণত হবে । এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ মোসাদ্দেক হোসেন বলেন , খেজুর গাছ রোপণ ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আমরা ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছি । ইট ভাটায় খেজুর গাছ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহারে সরকারিভাবে বন্ধে উর্দ্ধোতন কর্তৃকক্ষের সাথে আলোচনা করা হবে । এছাড়া গুড়ের ন্যায্য মূল্য পাওয়ার নানা উদ্যোগ নেয়া হবে ।
Leave a Reply