২০শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ।৭ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ।রবিবার

ডুমুরিয়ায় খেজুর রসের সন্ধানে গাছ তুলসে গাছিরা।

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

সরদার বাদশা,নিজস্ব প্রতিনিধি ।

 

 

প্রতি বছরের মতো ডুমুরিয়া অঞ্চলের গাছিরা খেজুরের রস আহরণের জন্য তোড়জোড় শুরু করেছে । গাছিরা খেজুর গাছ থেকে রস বের করার জন্য শুরু করেছেন প্রাথমিক পরিচর্যা । স্থানীয় ভাষায় এটাকে বলা হয় গাছ তোলা । এক সপ্তাহ পরই আবার চাছ দিয়ে নলি , গুজা লাগানো হবে । খেজুর গাছ থেকে রস বের করতে তিন সপ্তাহ পেরিয়ে চতুর্থ সপ্তাহে রস আহরণ শুরু হয় । গ্রাম বাংলায় এখন চোখে পড়ছে খেজুর গাছ তোলা দৃশ্য । গাছিরা এখন মাঠে মাঠে মহা ব্যস্ত সময় পার করছে । আর কিছুদিন পরই গৌরব আর ঐতিহ্যের প্রতীক মধুবৃক্ষ থেকে সুমধুর রস বের করে গ্রামের ঘরে ঘরে শুরু হবে নতুন গুড় , পাটালি তৈরির মহা উৎসব । গ্রামে গ্রামে খেজুরের রস জ্বালিয়ে পিঠা , পায়েস , মুড়ি মুড়কি নানা রকমের মুখরোচক খাবার তৈরির করার ধুম পড়বে । আর রসে ভেজা কাচি পোড়া পিঠার ( চিতই পিঠা ) স্বাদই আলাদা । নলেন গুড় , ঝোলা গুড় ও দানা গুড়ের সুমিষ্ট গন্ধেই যেন নাগ জুড়িয়ে যায় । রসনা তৃপ্তিতে এর জুড়ি নেই । নলেন গুড় পাটালির মধ্যে নারিকেল কোরা ও তিল ভাজা মিশালে আরো সুস্বাদু লাগে। খেজুরের গুড় থেকে ‘ ব্রাউন সুগার ‘ উৎপাদনেরও সুনাম রয়েছে । অবশ্য খেজুর গাছ অন্যান্য গাছের মতো বপন করা বা সার মাটি দিতে হয় না । প্রাকৃতিক নিয়মেই মাঠে পড়ে থাকা খেজুরের আঁটি ( বিচি ) থেকে চারা জন্মায় । সৃষ্টি হয় খেজুরের বাগান । তবে খেজুর গাছ ইট ভাটার জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ায় বেশ আগে থেকে এ অঞ্চলে গুড় , পাটালির উৎপাদন বহুলাংশে কমে গেছে । এখন আর আগের মতো মাঠ ভরা খেজুর বাগানও নেই । নেই মাঠে মাঠে রস জ্বালানো বান ( চুলো ) । যা আছে তা নিতান্তই কম । গুড় ও পাটালি পাওয়া দুষ্কর । এ মৌসুমে যা তৈরি হয় তা রীতিমতো কাড়াকাড়ি শুরু হয়ে যায়। আবহমান কাল থেকে এই বাংলায় নবান্নের উৎসব পালনে খেজুর গুড়ের কদর বেশি । উৎসব পালনে ও খেজুর গুড়ের কদর বেশি । চুকনগর অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে , গাছিরা গাছ পরিষ্কার বা তোলা চাচা করার জন্য গাছি দা ও দড়ি তৈরিসহ ভাড় ( মাটির ঠিলে ) ক্রয় ও রস জ্বালানো জায়গা ঠিক করাসহ বিভিন্ন কাজে রয়েছে ব্যতিব্যস্ত । চুকনগর পশ্চিমপাড়া নুর আলী সরদার ও আবুল হোসেন জানান গাছ কাটা , রস জ্বালানো ও গুড় – পাটালি তৈরির উপকরণের মূল্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ায় এবার অন্য বছর গুলোর তুলনায় গুড় পাটালির দাম বেশি হবে । খেজুর গাছ তোলার গাছি আমজাদ মোড়ল ও মালতিয়া আফসার সরদার গাছিরা বলেন , শীত চলে আসছে । এখন খেজুর গাছ তোলার সময় । খেজুর রসের গুড় – পাটালি তৈরি করে চুকনগর, আঠারো মাইলসহ বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করা হয় । এখান থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে চলে যায় । এতে আমরা অনেক লাভোবান হয়ে থাকি । কিন্তু ইট ভাটায় খেজুর গাছ মেরে জ্বালাানি কাজে ব্যবহার করার কারণে এ ঐতিহ্য বিলীন হতে চলেছে । সরকারিভাবে উদ্যোগ না নিলে অনেক ক্ষতিগ্রস্থ হতে হবে । এ অঞ্চলে খেজুর গাছের সংখ্যা কমে যাওয়ায় ঐতিহ্য ধরে রাখতে সরকারের বন বিভাগের উদ্যোগে গত কয়েক বছর আগে খেজুর গাছ রোপণের কাজ শুরু করেছে । উপজেলার জীববৈচিত্র সংরক্ষণ ও প্রাকৃতিক পরিবেশ উন্নয়ন ‘ প্রকল্পের আওতায় এ অঞ্চলে রোপিত হয়েছে খেজুর গাছের হাজার হাজার আটি । দেশি জাতের সাথে পরীক্ষামূলকভাবে আরব দেশীয় খেজুরের চারাও রোপণ করা হয়েছে বলে বন বিভাগ জানিয়েছে । তবে ইট ভাটায় খেজুর গাছ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার সরকারিভাবে নিষিদ্ধ না করলে এক সময় খেজুর গাছ পরবর্তী প্রজন্মের কাছে শুধু আরব্য উপনাসের গল্পে পরিণত হবে । এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ মোসাদ্দেক হোসেন বলেন , খেজুর গাছ রোপণ ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আমরা ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছি । ইট ভাটায় খেজুর গাছ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহারে সরকারিভাবে বন্ধে উর্দ্ধোতন কর্তৃকক্ষের সাথে আলোচনা করা হবে । এছাড়া গুড়ের ন্যায্য মূল্য পাওয়ার নানা উদ্যোগ নেয়া হবে ।

এই পোস্টটি আপনার সামাজিক মিডিয়াতে সেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রনজিৎ বর্মন শ্যামনগর(সাতক্ষীরা)প্রতিনিধি ঃ

সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলায় নীলাকাশ টুডের সম্পাদক মোঃ নুরুজ্জামানের সড়ক দূর্ঘটনায় মর্মান্তিকভাবে মৃত্যু হয়েছে।

শুক্রবার (২৬ জুলাই) রাত সাড়ে দশটায় শ্যামনগর উপজেলা সদরের নিকবর্তী গোপালপুর সড়কে কুলখালী নামক স্থানে দূর্ঘটনাটি ঘটে।

নিহতের পরিবার ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায় রাত সাড়ে দশটায় নিজ বাইসাইকেল যোগে নিজ বাড়ী উপজেলার নুরনগর ইউপির নুরনগর গ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা হন। এ সময় গোপালপুর মুক্তিযোদ্ধা সড়কে কুলখালী নামকস্থানে নির্মানাধীন বক্স কালভার্টের গর্তে সাইকেল সহ পড়ে যান। নির্মানাধীন বক্স কালভার্টের বাহিরে বের হওয়া লোহার রড তার মাথায় ছিদ্র হয়ে ঢুকে যেয়ে এক পাশ থেকে অপরপাশে বের হয়ে যায় পর স্থানীয়রা শ্যামনগর উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাঃ আনিছুর রহমান মৃত বলে ঘোষণা করেন।

শ্যামনগর প্রেসকাবের সাবেক সভাপতি আকবর কবীর বলেন কিছুদিন পূর্বে এই বক্স কালভার্ট তৈরী করতে যেয়ে একই সড়কে মোমিন মল্লিক নামে এক শ্রমিক মারা যান। তিনি আরও বলেন  নির্মানাধীন বক্স কালভার্টের  ঠিকাদার হিসাবে কাজ করছেন এস এম আবুল বাসার।

নীলাকাশ টুডের সম্পাদক মোঃ নুরুজ্জামানের মৃত্যুতে গভীর ভাবে শোক প্রকাশ করেছেন সাতক্ষীরা-৪ আসনের এমপি এস এম আতাউল হক দোলন, শ্যামনগর উপজেলা প্রেসকাবের আহবায়ক শেখ আফজালুর রহমান সহ সকল সাংবাদিকবৃন্দ, সুন্দরবন প্রেসকাবের সাংবাদিকবৃন্দ প্রমুখ।

ছবি- নিহত নীলাকাশ টুডের সম্পাদক মোঃ নুরুজ্জামান।

রনজিৎ বর্মন
তাং-২৭.৭.২৪

নীলাকাশ টুডের সম্পাদক নুরুজ্জামান সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত।