সরদার বাদশা,নিজস্ব প্রতিনিধি ।
এখন কে না চেনে প্রাকৃতিক ভেষজ গুণসমৃদ্ধ এই লতানো গাছকে ? এই চুই ঝাল মসলা দিয়েগরু খাসিসহ বিভিন্ন মাংসের রান্নার স্বাদ বাড়িয়ে তোলা মসলার রান্নার ব্যবহার খুলনা, যশোর, সাতক্ষীরা ছাড়িয়ে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাসহ সমগ্র বাংলাদেশ বিভিন্ন স্থানে সুপরিচিত চুই ঝাল নামে । অচিরেই এই চুই ঝালের গুঁড়া মসলা আসছে বাজারে ।খুলনা ডুমুরিয়া উপজেলার চুকনগর এলাকার বরাতিয়া গ্রামের কৃষক নবদ্বীপ মল্লিক ও নিউটন মণ্ডলের উদ্যোগে এ চুই ঝালের গুঁড়া শুধু দেশীয় বাজারে নয় এখন রপ্তানি হবে হচ্ছে। শিকড় , বাকল ও ডাল রোদে শুকিয়ে ব্লেন্ডার মেশিনে পিষে চুই ঝালের গুঁড়া মসলা তৈরি করছেন নবদ্বীপ ও নিউটন । নবদ্বীপ জানালেন , ২০১৭ সালে কৃষি অফিসের সহায়তায় চুই ঝালের বাণিজ্যিক রূপ দেওয়ার কাজ শুরু করেন তারাহ । ২০১৮ সালে দেশের বিভিন্ন স্থানের কৃষকদের কাছে চুই ঝালের চারা বিক্রির পাশাপাশি এর চাষাবাদে উৎসাহিত করতে থাকেন তরা । এরপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি তাদের । চুই ঝালের শিকড় , কাণ্ড , লতা বিক্রির মাধ্যমে তাদের ভাগ্য পাল্টে যায় । কিন্তু মুশকিল হলো , চুই লতা কাটার পর এর শিকড় , বাকল , ডাল বেশি দিন রাখা সম্ভব হয় না । অন্যদিকে শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেলে এটিকে আর মসলা হিসেবে ব্যবহার করা যায় না । চুইয়ের কাঁচা ডাল , শিকড় ও লতা কুরিয়ার করে পাঠাতে গেলে অনেক সময় দুই তিন দিন লেগে যায় । তখন চুই ঝাল নষ্ট হয়ে যায় । এর পরপরই তাদের মাথায় গুঁড়া চুই ঝালের ভাবনা আসে । নবদ্বীপ জানান , চুই ঝাল চিবিয়ে খেয়ে যে স্বাদ পাওয়া যায় । গুঁড়া মসলায় তা পাওয়া যাবে না । কিন্তু গুঁড়া মসলায়ও দারুণ একটা স্বাদ রয়েছে । এখন তাদের উদ্ভাবিত এই চুইয়ের গুঁড়া নিয়ে শিগগিরই প্রথমবারের মতো থাইল্যান্ড যাবেন সাতক্ষীরার সাঈদ । বিদেশের বাজার ধরতে পারলে চুই ঝালের কদর বহুগুণে বেড়ে যাবে । নবদ্বীপ মল্লিকের বাবা সুভাষ মল্লিক বলেন , দেড় বছর থেকে পাঁচ বছর বয়সী চুই ঝাল খেতে সুস্বাদু । চুই ঝালের গাছ দুই রকমের । একটি ঝুটো চুই , যা মাটিতে হয় । আরেকটি গাছ চুই । যা অন্য গাছের সঙ্গে লতার মতো উঠে যায় । দুই চুই ঝালের দুই রকম স্বাদ । তবে ঝুটো ঝালে স্বাদ বেশি । নবদ্বীপ মল্লিকের স্ত্রী মুক্তা মল্লিক বলেন , মূলত চুই ঝালের মসলা মুড়ো ঘণ্ট ও মাংসে ব্যবহার করা হয় । খিচুড়ি ও মুড়ি মাখতেও ব্যবহার করা যায় । বিভিন্ন তরকারিতেও দেওয়া যায় চুই ঝাল । নিউটন মণ্ডল বলেন , চুই গাছের শিকড় ও ডাল বিক্রি করে অনেক সময় উপযুক্ত মূল্য পাওয়া যায় না । তাই কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে চুই ঝালের পাউডার তৈরির কাজ শুরু করি আমরা । এবার এক কেজি চুই ঝালের গুঁড়া থাইল্যন্ডে পাঠাচ্ছি । সাড়া পাওয়া গেলে সেখানে এটি বাজারজাত করা হবে । তিনি জানান , ১২ কেজি চুইয়ের শিকড় ও ডাল শুকিয়ে এক কেজি পাউডার তৈরি হয় । ফলে এর দাম অনেক বেশি পড়ে যায় । আমরা পাউডারের মান ও প্রকারভেদে দাম নির্ধারণ করেছি । কেজি প্রতি পাঁচ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ১০ হাজার টাকা দামে মানভেদে চুই ঝালের পাউডার বিক্রি করা হবে । ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোঃ মোসাদ্দেক হোসেন বলেন , কৃষি বিভাগের একটি প্রকল্পের মাধ্যমে নবদ্বীপ ও নিউটন সর্ব প্রথম বাণিজ্যিকভাবে প্রদর্শনী আকারে মাতৃগাছ তৈরি করেন । তারপর থেকে চারাগাছ তৈরি করে বিক্রি করছেন । চলতি বছর এ পর্যন্ত তারা ৩০-৪০ লাখ টাকার চারা বিক্রি করেছেন । নবদ্বীপ মল্লিক ও নিউটন মণ্ডল স্থানীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে চুই ঝালের গুঁড়া তৈরি করে বিদেশে পাঠাচ্ছেন । প্রথম চালান তারা পাঠাচ্ছেন থাইল্যান্ডে । তিনি বলেন , চুই ঝাল যাতে সবখানে ছড়িয়ে পড়ে । সে জন্য আমাদের একটি প্রকল্প রয়েছে । এপ্রকল্পের আওতায় গোপালগঞ্জ , খুলনা , বাগেরহাট ও পিরোজপুর জেলার প্রতিটি উপজেলায় ৪-৫টি চুই গ্রাম হবে । এই গ্রামের প্রত্যেক সদস্যের বাড়িতে অন্তত দুটি চুই ঝালের গাছ লাগানো হবে ।
Leave a Reply