মোঃ আনিসুর রহমান, বাগেরহাট জেলা প্রতিনিধি।
টানা বর্ষায় প্লাবিত হয়ে হাজার হাজার চিংড়ি ঘের ও পুকুর তলিয়ে যাওয়ায় সর্ব সান্ত হয়ে গেছে বাগেরহাট জেলার ঘের ব্যবসায়ীরা।
বাগেরহাট মৎস্য বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা (ডিএফও) এ এস এম রাসেল জানান, গত দুই দিনের অতি বৃষ্টি ও প্রবল জোয়ারের পানিতে রামপাল, মোংলা, শরণখোলা, মোরেলগঞ্জ ও বাগেরহাট সদর উপজেলার ৪৭টি ইউনিয়নের মাছের ঘের পানিতে ভেসে গেছে। এর মধ্যে সাড়ে সাত হাজার পুকুর; ৯ হাজার চিংড়ির ঘের রয়েছে।রামপাল উপজেলার বাঁশতলি গ্রামের মাছ চাষি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ৫০ বিঘা জমিতে ঘেরে মাছের চাষ করছিলেন তিনি। গত তিনদিনের টানা বৃষ্টিতে মাছের ঘের তলিয়ে গেছে। এতে তার অন্তত পাঁচ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।একই এলাকার চাষি পাভেল হোসেন বলেন, “পাঁচ বিঘা জমির ঘেরে গলদা, বাগদা ও সাদা মাছ চাষ করছিলাম। বাগদা চিংড়ি বড় হয়ে উঠেছিল এবং সম্প্রতি তা বাজারে বিক্রিও শুরু করেছিলাম। কিন্তু গত তিনদিনের টানা বর্ষণে ঘের ভেসে মাছ বের হয়ে গেছে। এই ক্ষতি কিভাবে কাটিয়ে উঠবো তা বুঝতে পারছি না।“
বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার বহরবুনিয়া এলাকার ঘের মালিক শেখ হুমায়ুন কবির বলেন, দেড়শ বিঘা জমির ঘেরে বাগদা ও সাদা মাছের চাষ করি। গত মে মাসে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবের জোয়ারের পানিতে তলিয়ে মাছ ভেসে যায়। পরে আবার ঘেরে সাদা মাছ ও বাগদার পোনা ছাড়ি।
এইবার টানা বৃষ্টির পানিতে ঘের ভেসে আমাকে সর্বশান্ত করে দিয়েছে। প্রতি বছর দুর্যোগে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছি। দুর্যোগ যেন পিছু ছাড়ছেনা উপকূলের বাসীর।”
বাগেরহাট জেলা চিংড়ি চাষি সমিতির সভাপতি ফকির মহিতুল ইসলাম বলেন, বাগেরহাটে টানা বৃষ্টির পানিতে কয়েক হাজার মাছের ঘের ভেসে গেছে। এতে কয়েক কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে চাষিদের।
“গত কয়েক বছর ধরে প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেন উপকূলের মানুষদের গলারকাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই উপকূলীয় জেলার আশি ভাগ মানুষ মাছ চাষের উপর নির্ভরশীল। এই খাতের আয় দিয়ে তাদের সংসার চলে। বারবার দুর্যোগে মাছ চাষিরা সর্বশান্ত হয়ে যাচ্ছে। দেশের রপ্তানি আয়ের বড় ভূমিকা রাখে বাগেরহাট জেলা। অনেক চাষি ব্যাংক ও এনজিও থেকে ঝণ নিয়ে মাছের চাষ করে থাকে।”তাই এই খাতকে টিকিয়ে রাখতে সুদমুক্ত ঋণের ব্যবস্থা করতে সরকারের কাছে দাবি জানান মহিতুল ইসলাম।
বাগেরহাট মৎস্য বিভাগের বিভাগীয় মৎস্য কর্মকর্তা (ডিএফও) এ এস এম রাসেল বলেন, সব মিলিয়ে মাছের ঘের ভেসে প্রায় ১১ কোটি টাকার ক্ষতির হিসাব পেয়েছি। এর মধ্যে আড়াই কোটি টাকার সাদা মাছ ও সাত কোটি টাকার চিংড়ির ক্ষতি হয়েছে। কাঁকড়া ও চিংড়ির পোনার ক্ষতির পরিমাণ ২৫ লাখ টাকা। এছাড়াও অবকাঠামোতে ক্ষতি হয়েছে ৫০ লাখ টাকা।
বৃষ্টিপাতের ধারা অব্যাহত থাকলে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা এ মৎস্য কর্মকর্তার।
তিনি বলেন, জেলায় ছোটবড় মিলিয়ে ৬৭ হাজার মাছের ঘের রয়েছে। চলতি অর্থবছরের ৩৩ হাজার মেট্রিকটন মাছ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।
এর আগে গত মে মাসে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের জোয়ারের পানিতে বাগেরহাটের ৬ হাজারের বেশি মাছের ঘের ভেসে যায়। সে সময়ে চাষিদের অন্তত ৯ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়।তবে এবারের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি।জেলার উপকূলীয় এলাকায় যেখানে তাকানো হয় সেখানেই পানি আর পানি।সব ঘের এখন এক হয়ে গেছে। দরিদ্র পীড়িত এসব এলাকায় মাছ চাষই মানুষের অন্যতম উৎস হওয়ায় যার যতটুকু জমি আছে সেখানেই মাছের চাষ করে থাকেন।কিন্তু প্রতি বছর যে হারে প্রাকৃতিক দূর্যোগ হানা দিচ্ছে তাতে ভবিষ্যতে এই পেশার প্রতি মানুষের আগ্রহ কমে যেতে পারে বলে সাধারণ মৎস চাষিদের ধারণা।
## মোঃ আনিসুর রহমান, বাগেরহাট জেলা।
Leave a Reply