নিজস্ব প্রতিনিধি,সরদার বাদশ।
খুলনা ডুমুরিয়া উপজেলার চুকনগর এলাকার গ্রামগঞ্জের রাস্তার দিয়ে হাঁটলে দেখতে পাবেন রাস্তার পাশ দিয়ে নাকে আসছে পাট জাক দেওয়া পচা গন্ধ। কেউ কেউ নাক ঢাকে কাপড় দিয়ে কিন্তু এই গন্ধ যেন কৃষকের নাকে স্বপ্ন পুরোনের গন্ধ,এ গন্ধই জানান দিচ্ছে সোনালী আঁশের বার্তা। চলতি মৌসুমে রেকর্ড পরিমাণ পাটের আবাদ করা হয়েছে ডুমুরিয়া উপজেলাতে। আবহাওয়া পাট চাষের অনুকূলে থাকায় ফলন ভালো হয়েছে। পাটের এমন বাম্পার ফলনে ও দাম ভাল পাওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। এবার তারা বেশি লাভের আশা করছেন। সুদিন ফিরে এসেছে পাট চাষে এমন কথা বলেছেন অনেক কৃষক।
পাট চাষের প্রধান সমস্যা হলো আঁশ পচানোর পানি। অন্য বছর কৃষক পানির পেছনে ছুটলেও এবার পর্যাপ্ত বৃষ্টি হওয়াতে তারা পাট ক্ষেতেই পাশে খানা,খন্দপ,নর্দমা বা পুকুরে জাগ দেয়ার কাজ সারছেন কৃষকরা । কৃষকরা জানান পাট মূলত বৃষ্টিনির্ভর ফসল মৌসুমের শুরুতে এবার বৃষ্টি হয়নি। তখন পাটগাছের বৃদ্ধি কিছুটা কম হয়েছে। পাট কাটার সময় প্রচুর বৃষ্টি হওয়ায় পাট জাগ দিতে তেমন কোন সমস্যা হয়নি, এতে পরিবহন ব্যয়ও সাশ্রয় হয়েছে। সব মিলিয়ে এবার পাট চাষে খরচ অনেক কম হয়েছে। গত বছর পানির জন্য পাট জাগ দিতে পারিনি। পাট চাষের মাঝামাঝি সময় তীব্র খরা হওয়ায় চাষ হওয়া পাটের পাতা শুকিয়ে যাচ্ছিল। এবছর আবহাওয়াতে বৃষ্টিপাত ভালো হওয়ায় কৃষকদের পাট পঁচানো ও আশ ছড়াতে সমস্যা হচ্ছে না। ইতোমধ্যেই আবাদকৃত ৮০ ভাগ জমির পাট কর্তন শেষ। গতবারের তুলনায় এবার পাটের দাম রয়েছে বেশি, চুকনগর বাজারের পাট ব্যবসায়ী আবদুল গফুর বলেন গত বছর পাটের দাম ছিল প্রতি মণ ১ হাজার থেকে ১৫০০শ’ টাকা,এবার সেই পাটের দাম এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৫০০শ`থেকে ২ হাজার ৭০০শত টাকায়।
চুকনগর দক্ষিণ গোবিন্দ কাঠি গ্রামের কৃষক শেখ আসাবুর রহমান বলেন তিনি দুই বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছেন, বিঘা প্রতি তার খরচ হয়েছে ৭০০০টাকা তিনি বিঘাপ্রতি পাট পেয়েছেন ১০মন এখন বিক্রি করছে গড়পাট ২৫০০শ’ টাকা আর লালি পাঠ ২৭০০শ’ টাকা।
চুকনগরের কৃষক মেহেদী হাসান বাবলু বলেন দুই বিঘা জমিতে পাট লাগিয়েছেন, বিঘা প্রতি জমিতে ১০ থেকে ১২ মণ পাট সর্বোচ্চ উৎপাদন হয়েছে। বিঘা প্রতি খরচ হয়েছে ৫০০০টাকা থেকে ৭০০০টাকা আর বিঘা প্রতি পাটকাঠি হয় ৮০ থেকে ৯০ আটি। যার প্রতি আটির দাম ৫০থেকে ৬০ টাকা। কৃষকরা যেমন সোনালী আর পাট বিক্রি করে দাম পাচ্ছেন ভালো তেমন পাটের পাটকাঠি বিক্রি করেও দাম পাচ্ছেন ভালো।
ডুমুরিয়ার মাগুরাঘোনার বেতাগ্রামের কৃষক মনো গোলদার বলেন তিনি ৭বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছেন এবার কৃষকরা বেশি চাষাবাদ করেছে এন,এস,সি,বি,এ,ডিসি-১ ,আর, মহারাষ্ট্র,আই-৮ জাতের পাট। এর জীবনকাল একশ’ থেকে একশ’ ১০ দিন। তিনি বলেন আর কিছু দিন পাটের দাম এমন থাকলেই হবে। কৃষকের কষ্ট কেউ বোঝে না ভাই। দেখা যাবে ক’দিন পরই দাম কমে গেছে। তাইতো তাড়াতাড়ি করে পাট বিক্রি করে দিচ্ছি।
ডুমুরিয়া উপজেলার কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোসাদ্দেক হোসেন বলেন ,গেল বছর ডুমুরিয়াতে ৮২০হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছিল , এবছর পাট চাষ করেছে ডুমুরিয়াতে ৭৬০হেক্টর জমিতে পাট চাষ করেছেন চাষিরা, গেল বছরের থেকে ৪০হেক্টর পাট চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে ,গেল বছর পাট চাষীদের সংখ্যা ছিল ৩হাজার ,এবছর পাট চাষ করেছে ৭হাজার কৃষক। গেল বছর থেকে এ বছর ৪হাজার কৃষক পাট চাষ করেছে বেশি , এবছর গেল বছরের তুলনায় পাটের দাম একটু বেশি। গেল বছর পাটের দাম ছিল শুরুতে ১৫০০ থেকে ২২০০ টাকা পর্যন্ত এবছর পাটের দাম ২৫০০শত টাকা থেকে ২৭০০টাকা পর্যন্ত, পাটের ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকরা খুশি, এবছর কৃষকরা পাটের ভালো দাম পাওয়ায় আগামী বছর পাট চাষে কৃষকদের আগ্রহ আরো বাড়বে পাট দিয়ে পলি ব্যাগের আদলে দেশে ব্যাগ বানানোর প্রক্রিয়া ও চলছে। তিনি আরো বলেন, পাটের মান ভালো রাখার জন্য প্রবাহমান এবং পরিষ্কার পানিতে পঁচানোর জন্য কৃষকদের বলা হচ্ছে। সাথে সাথে সেখানে কয়েক কেজি ইউরিয়া সারও ছিটিয়ে দিতে বলা হয়েছে । পচানোর ক্ষেত্রে গাছের পাতা বা কাদা মাটি এড়িয়ে চলায় ভালো।
Leave a Reply