সরদার বাদশা,নিজস্ব প্রতিনিধি,
কীটনাশক মানবদেহের জন্য ক্ষতিকারক , এই কীটনাশক ছাড়া কিভাবে ফসল উৎপাদন করা যায় এই নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা করছে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএআরআই) কীটনাশক ছাড়া এবং পরিবেশ দূষণমুক্ত রেখে চুকনগরে বিভিন্ন এলাকায় ধানক্ষেতের পোকা-মাকড় দমন ও বংশ বিস্তার রোধে ডুমুরিয়ার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে কৃষকরা এবার পার্চিং পদ্ধতি ব্যবহার শুরু করেছে, জমির মাটি, ফসল ও মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর কীটনাশকের পরিবর্তে ক্ষেতে পার্চিং পদ্ধতির ব্যবহারের প্রতি এখানকার কৃষকদের আগ্রহ অনেকাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এ পদ্ধতি ব্যবহার বাড়াতে কৃষি বিভাগ কৃষকদের সচেতন করে চলেছে।
কৃষি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ পদ্ধতি ব্যবহারের ফলে একদিকে কৃষকরা আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন, অন্যদিকে কৃষি কাজের জন্য শ্রমও দিতে হচ্ছে কম। জমিতে পাখির অবস্থান স্থাপনা করে পাখির মাধ্যমে চলতি মৌসুমে আমন ধানের ক্ষতিকর পোকা নিধনের জন্য এ পদ্ধতি ব্যবহার করা হচ্ছে। পার্চিং মানে খেতে ডালপালা পুঁতে দেওয়া। ফসলের জমিতে ডাল, কঞ্চি, বাঁশের খুঁটি ইত্যাদি এগুলো হতে আমন ধান ক্ষেতে পাখি বসার ব্যবস্থা করলে পাখি ক্ষতিকারক পোকার , বাচ্চা, ডিম খেয়ে পোকা দমন করে। মূলত ফিঙে, শালিক, বুলবুলি, শ্যামা, দোয়েল, এসব পাখি পার্চিংয়ে বসে পোকা ধরে খায়। ফসলের পোকা দমনের এ পদ্ধতি বলতে গেলে ব্যয়বিহীন ও পরিবেশবান্ধব। ফসলের খেতে ডেড পার্চিং ও লাইভ পার্চিং দুটিই করা যায়। মরা ডালপালা পুঁতে দিলে তা হবে ডেড পার্চিং। ধনচে গাছ আড়র গাছ সহ ছোট ছোট কিছু গাছ জমির আইলে নির্দিষ্ট স্থানে লাগিয়ে রাখলে এসব জীবন্ত গাছ জমিতে নির্দিষ্ট দূরত্বে লাগিয়ে দেওয়া হলো লাইভ পার্চিং। প্রতি শতকে অন্তত একটি বাঁশের আগা, কঞ্চি বা ডাল পুঁততে হয়। ফসল রোপণের পরপরই পার্চিং স্থাপন করতে হয়। ফসলের সর্বোচ্চ উচ্চতা থেকে কমপক্ষে এক ফুট উচ্চতায় পার্চিং করা উচিত বলে জানান
খুলনা ডুমুরিয়া উপজেলার ৫নম্বর আটলিয়া ইউনিয়নের চুকনগর পশ্চিম পাড়ার মোঃ সিরাজ সরদার ৪বিঘার বেশি জমিতে আমন ধানের চাষ করেছেন । তিনি খেতের মধ্যে ৫০ টি বাঁশের কঞ্চি ও গাছের ডাল পুঁতে রেখেছেন। সেখানে পাখি এসে বসছে। খেতের ক্ষতিকর পোকামাকড় ধরে খাচ্ছে।মোঃ সিরাজ সরদার বলেন পোকামাকড়ের হাত থেকে ধানের গাছ রক্ষা করতে চারা লাগানোর মাসখানেকের মধ্যে নির্দিষ্ট ব্যবধানে তিনি গাছের ডাল ও কঞ্চি পুঁতে রেখেছেন। পাখিগুলো ক্ষতিকর পোকামাকড় ধরে খাচ্ছে। অন্যবার যেখানে তাঁকে চার-পাঁচ দফা কীটনাশক ব্যবহার করতে হতো, এ বছর মাত্র একবার তিনি কীটনাশক ব্যবহার করেছেন।
সিরাজ সরদার এর মত অনেকে চুকনগরের কৃষকরা পাখি বসার উপযোগী বাঁশের আগা, কঞ্চি, গাছের ডাল প্রভৃতি পুঁতে আমন খেতে ক্ষতিকর পোকা দমন করছেন। অনেক জমিতে মাঝেমধ্যে লাগিয়েছেন ধঞ্চেগাছ। এতে কৃষকেরা উপকার পাচ্ছেন। কীটনাশক কম লাগায় কৃষকেরা খুশি।
খেতের ক্ষতিকর পোকা দমনের ওই প্রাকৃতিক পদ্ধতির নাম ‘পার্চিং’। চুকনগর কৃষকদের কাছে এই পদ্ধতি দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে। খর্নিয়া ,চুকনগর ,মাগুরাঘোনা ,কয়েকটি অঞ্চলে আমন খেত ঘুরে দেখা গেছে, খর্ণিয়ার কৃষক ইসলাম শেখ ৩বিঘা জমিতে , চুকনগরের মেহেদি হাসান বাবলু ,হামিদুর রহমান (আনু )৪বিঘা জমিতে , মাগুরাঘোনা আজিজুর রহমান তিন বিঘা জমিতে ,সোহরাব হোসেন ,৫বিঘা জমিতে আমন খেতের মধ্যে কিছু দূর পরপর কৃষক বাঁশের আগা, কঞ্চি, গাছের ডাল প্রভৃতি পুঁতে দিয়েছেন। অনেকে এখনো ডাল পুঁতছেন। অনেক খেতে আলের পাশে এবং জমির মাঝখানে ধঞ্চে লাগানো হয়েছে। এসব পার্চিংয়ে ফিঙে, শালিক প্রভৃতি পাখি বসে থাকতেও দেখা গেছে।
ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোছাদ্দেক হোসেন বলেন, এ বছর ডুমুরিয়ায় ১২ হাজার ৫৫০হেক্টরমত জমিতে আমন লাগানো হয়েছে। শতভাগ জমি পার্চিংয়ের আওতায় আনা চেষ্টা করছি ৯০হেক্টরের মতো জমিতে লাইভ পার্চিং হয়েছে। বাকি জমি আমরা সরেজমিনে গিয়ে কৃষকদের প্রশিক্ষণের দিতেছি লাইভ পার্চিংয়ে একদিকে পোকা দমন হয়, তেমনি এসব গাছের পাতা জমিতে পড়ে নাইট্রোজেন সারের মাত্রাও বাড়িয়ে দেয় । পরিবেশ ও কৃষিবান্ধব পার্চিং পদ্ধতির পাশাপাশি আমন ফসলের খেতে পোকামাকড়ের উপস্থিতি যাচাইয়ের জন্য আরেক পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ‘আলোক ফাঁদ’ প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকায় স্থাপন করা হচ্ছে। কৃষকদের দেখানো হচ্ছে। যাতে করে তারা দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে এ পদ্ধতি মাধ্যমে চাষাবাদ করতে পারে।
Leave a Reply