মনির হোসেন (স্টাফ রিপোর্টোর):
অপরিষ্কার জমিতে বছরের পর বছর ধরে পলিথিন,ভাঙ্গা ভেড়া আর ভাঙ্গা টিনের চাউনীর ঘরে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন, নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার মোমিনপুর শীল বাড়ির ধীরেন্দ্রনাথ চন্দ্র শীল ও তার পরিবার ।
এক সময় পাড়ায় পাড়ায় হেঁটে মানুষকে চিকিৎসা দিতেন। শেষ বয়সে এসে একটি ঔষুধের ফার্মেসিতে মানুষকে সেবা দিতে শুরু করেন। প্রায় ১০ বছর আগে প্যারালাইসিসে কথা বলার শক্তি হারায় ধীরেন্দ্রনাথ। চলাচলের শক্তি থাকলেও কথা বলতে পারেন না বলে, এখন কেউই তার কাছ চিকিৎসা নেন না। একদিকে ছেলে-মেয়ে নেই। অন্যদিকে আয়-রোজগার নেই। সব মিলিয়ে মানুষিক ভাবে ভেঙ্গে পড়েন অসুস্থ ধীরেন্দ্রনাথ।
এক সময়ের সুপরিচিত এই পল্লী চিকিৎসক ধীরেন্দ্রনাথ চন্দ্র শীল ও তার স্ত্রী আজ গৃহহীন। অনাহারে, রোগে শোকে, রোদে তীব্রতা আর বৃষ্টির পানিতেই জিবন অতিবাহিত করছে তারা।
সরজমিনে গিয়ে জানা যায়, কেবল ঘরের জমিন ছাড়া কিছুই নেই ধীরেন্দ্রনাথের। ২০১৬ সালে একটি প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড পায়, ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস! ভাতার কার্ড হলেও কপালে জোটেনি ভাতা তোলার বই। তা হলে ধীরেন্দ্রনাথ চন্দ্র শীলের ভাতা কে নিচ্ছে? কারা তুলে খাচ্ছে? এ প্রশ্ন এলাকাবাসীর মনে।
ধীরেন্দ্রনাথ চন্দ্র শীলের সহধর্মিণী জানান, আমার স্বামী আজ ১০ বছর থেকে প্যারালাইসিসে অসুস্থ। আমার কোন ছেলে-মেয়ে নেই। জায়গা-জমি নেই। এই অচল স্বামী নিয়ে কোন রকম এইদিক সেইদিক থেকে খুঁজে এনে খাই। বাড়ির লোকজন কোন রকম আমাকে সহযোগিতা করেন। অসুস্থ হলে তাঁরাই আমার স্বামীকে ঔষুধ খাইয়ে বাঁচায়। আমার কাপড়-চোপড় বস্ত্রায়ন তারাই করে। আমি বাড়ির লোকজনের মুখের দিকে তাকিয়ে স্বামীকে নিয়ে এই টেরা বাসায় থাকি। আমাকে কেউ একটু আশ্রয় দেয় না। জনপ্রতিনিধিরা ঘরের আশ্বাস দিয়ে একাদিক বার কাগজপত্র নিয়ে গেছে। কিন্তু কোন ঘর দেয়নি। আমার স্বামীর বয়স ৭৩ বছর। সে বয়স্ক ভাতাও পায় না। ৫ বছর আগে(২০১৬ সালে) সাবেক মেম্বার আমি স্বামীকে একটা প্রতিবন্ধী কার্ড করে দেয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত আমার স্বামী কোন ধরনের ভাতা পায়নি। অনেক দিন হইছে আমরা মাছ-মাংস খেয়েছি। অনাহারে দিন কাঁটছে আমাদের। কোনদিন একবেলা খাই। কোনদিন না খেয়েই থাকতে হয়। কিছু চাল আর কিছু ডাল আছে। আজ তাই রান্না করবো।
একই এলাকার একজন ব্যক্তি জানান, অসহায় মানুষটির দুর্দশার কথা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের জানলেও তারা তাদের জন্য কোনো পদক্ষেপ নেননি। বৃদ্ধ বয়সে আগের মতো কাজ করতে পারেন না। নিরুপায় হয়ে খেয়ে না খেয়ে বেঁচে আছেন। বরং ভাতার কার্ড করে ও ভাতা পাওয়ার বই দেয়নি। তাই তারা ভাতা তুলতে পারছে না।
Leave a Reply