মহামারীর প্রভাব কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে ময়দার বৈশ্বিক বাণিজ্য। ২০২১-২২ মৌসুমে গমজাত পণ্যটির বাণিজ্য চলতি মৌসুমের তুলনায় ৭ শতাংশ বাড়তে পারে। সম্প্রতি ইন্টারন্যাশনাল গ্রেইন কাউন্সিল (আইজিসি) কর্তৃক প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
ময়দার বৈশ্বিক বিপণন মৌসুম শুরু হবে ১ অক্টোবর। আগামী বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর এ মৌসুম শেষ হবে। আসন্ন ২০২১-২২ মৌসুমে সব মিলিয়ে ১ কোটি ৪৯ লাখ টন ময়দা বিশ্ববাজারে জাহাজীকরণ হবে বলে জানিয়েছে আইজিসি। এপ্রিলে দেয়া পূর্বাভাসের তুলনায় জাহাজীকরণের পরিমাণ অপরিবর্তিত থাকবে। তবে চলতি ২০২০-২১ মৌসুমের তুলনায় বৈশ্বিক জাহাজীকরণের পরিমাণ বাড়বে। চলতি মৌসুমে ১ কোটি ৩৯ লাখ টন জাহাজীকরণের প্রাক্কলন করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
আইজিসি জানায়, করোনা মহামারীর প্রভাবে চলতি মৌসুমে ময়দার বৈশ্বিক বাণিজ্যে ধস নেমেছে। চলতি মৌসুমের পূর্বাভাস সত্য হলে এটি হবে ২০১৩-১৪ মৌসুমের পর ময়দার বৈশ্বিক বাণিজ্যের সর্বনিম্ন রেকর্ড। ওই মৌসুমে পণ্যটির বৈশ্বিক বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ১ কোটি ৩২ লাখ টন। চলতি মৌসুমে ময়দার বৈশ্বিক বাণিজ্য ২০১৯-২০ মৌসুমের তুলনায় ৫ শতাংশ কমতে পারে। ওই মৌসুমে জাহাজীকরণ হয়েছিল ১ কোটি ৪৭ লাখ টন।
আইজিসি জানায়, করোনা মহামারী শুরু হওয়ার পর থেকে বিশ্বজুড়ে কনটেইনার সংকট তীব্র আকার ধারণ করে। অন্যদিকে ক্রমাগত বাড়তে থাকে জাহাজীকরণ ব্যয়। এ কারণে চলতি মৌসুমে ময়দার বৈশ্বিক বাণিজ্যে ধস নামে। তবে নতুন মৌসুমে এসব প্রতিবন্ধকতা কেটে পণ্যটির বিশ্ব বাণিজ্য ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যাশা করা হচ্ছে। আইজিসির হিসাব অনুযায়ী আসন্ন মৌসুমে পণ্যটির বৈশ্বিক বাণিজ্য ৭ শতাংশ বাড়বে।
বিশ্বের শীর্ষ ময়দা আমদানিকারক দেশ ইরাক। চলতি মৌসুমে দেশটিতে গমের আবাদ নিম্নমুখী। আগামী মৌসুমেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে। ফলে ময়দা আমদানি ধারাবাহিকভাবে বাড়াচ্ছে ইরাক। ২০২১-২২ মৌসুমে ইরাকের ময়দা আমদানি ছয় লাখ টন বেড়ে ২৭ লাখ টনে উন্নীত হবে। অন্যান্য শীর্ষ আমদানিকারক দেশগুলোর মধ্যে আফগানিস্তানের ময়দা আমদানি এক লাখ টন কমে ১৯ লাখ টনে নেমে আসবে। তবে তৃতীয় শীর্ষ আমদানিকারক সিরিয়ার আমদানি বেড়ে দেড় লাখ টনে উন্নীত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে ২০২১-২২ মৌসুমে ময়দা রফতানিতে বিশ্বের নেতৃস্থানীয় থাকবে তুরস্ক। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে দেশটির ময়দা বাণিজ্য কিছুটা চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে। তবে আগামী মৌসুমে প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে দেশটির বাণিজ্য চাঙ্গা হয়ে উঠবে বলে প্রত্যাশা করছে আইজিসি। প্রতিষ্ঠানটির পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী মৌসুমে তুরস্ক ৫০ লাখ টন ময়দা বিশ্ববাজারে রফতানি করবে। ২০১৭-১৮ বিপণন মৌসুমের পর এটিই হবে দেশটির সর্বোচ্চ রফতানি। ওই মৌসুমে দেশটি ৫৪ লাখ টন ময়দা রফতানি করেছিল।
এদিকে কাজখস্তানের ময়দা রফতানি হ্রাসের পূর্বাভাস দিয়েছে আইজিসি। বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ রফতানিকারক দেশটি চলতি মৌসুমে সব মিলিয়ে ২৫ লাখ টন ময়দা রফতানি করতে সক্ষম হবে। তবে আগামী মৌসুমে রফতানির পরিমাণ কমে ২৩ লাখ টনে নেমে আসতে পারে। দেশীয় সরবরাহ সংকটের কারণে রফতানি কমিয়ে আনবে দেশটি। অন্যান্য শীর্ষ রফতানিকারক দেশের মধ্যে আর্জেন্টিনা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এবং মিসরের ময়দা রফতানিতে প্রবৃদ্ধি আসবে।
Leave a Reply