কল্পনা খন্দকার
বন্ধু মহলে আমার বেশ খ্যাতি ছিলো
সবার ভালো বন্ধু হিসেবে,
আমাদের পাড়ায় আমার
নামডাক ছিলো
লক্ষ্মী আর আত্মবিশ্বাসী মেয়ে বলে।
এই চঞ্চল চপলা মেয়েটি সবার মন
জয় করেছিলো তার সততা দিয়ে।
আমার ব্যক্তিত্বও নাকি মানুষের
মন ছুঁয়ে ছিল।
চাঁদনী রাত আমায় ঘর ছাড়া করতো,
আর ভীষণ কালো মেঘলা আকাশ
আমায় কেমন যেন ব্যাকুল করে তুলতো!
বৃষ্টি ভালবাসতাম বলে সবাই বলতো
আমি নাকি বেশ রোমান্টিক,
ঠিক যেমনটা অনেক ছেলের পছন্দ!
আমি ছোটবেলা থেকেই বেশ দূরন্ত
স্থিরতা শান্ত ভাব আমার চরিত্রে নেই।
আমার ডাগর চোখ আর সুন্দর চুল
অনেককেই নাকি মুগ্ধ করেছে।
এতো কিছু ছাপিয়ে সবচেয়ে বড় হয়ে উঠেছে
আমার গায়ের কালো রংটা।
গায়ের রংটা কালো বলেই হয়তো
প্রেম ভালবাসা নামক দুর্লভ বস্তুর
সাক্ষাৎ ঘটেনি আজো কপালে।
কেবল মাত্র কালো রঙের জন্য
বিয়ে ভেঙে গেছে অনেক বার।
একদিন কোন এক সামাজিক মাধ্যমে
একজনের সাথে
পরিচয় ঘটে বিয়ের ব্যাপারে,
কথা প্রসঙ্গে জানতে চাইলেন
এতো দিনে বিয়ে করিনি কেন!
বললাম, আমি কালো বলে অনেকবার
বিয়ে ভেঙে গেছে।
উনি আমার ভালোলাগা গুলো
জানতে চাইলেন,
বৃষ্টি, চাঁদ ভালবাসি শুনে বললেন
বেশ রোমান্টিক তো!
জানেন আমি ঠিক আপনারই মতো
রোমান্টিক কাউকে খুঁজছি।
বললাম আমার সবচেয়ে বড় দোষ
আমি কালো,
এর জন্য খানিকটা বয়সও হয়েছে
বিয়ে হয়নি।
উনি বললেন আমি একটু বয়সী
ম্যাচিউর কাউকেই খুঁজছি।
ক’দিন বেশ কথা হলো আমাদের।
বৃষ্টি দেখলে তাকে মিস করি কিনা
আরো কতো কি!
হুট করে একদিন বললেন আমি কি
তোমাকে দেখতে পারি!
আমি একটা শাড়ি পরা সাদামাটা
ছবি পাঠালাম।
আমার ছবি দেখার পর থেকে
ওনার কাজের চাপ বেড়ে গেলো,
আমার সাথে কথা বলার সময়
তার হাতে নেই বললেই চলে।
তারপর একদিন বলেই ফেললো
আমি ছাড়াও তুমি অনেকের সাথে
কথা বলো,
আমি ভালো মেয়ে চাই।
আমি তাকে আগেই বলেছিলাম
আমি রাত জাগতে ভালবাসি,
আমার অনেক বন্ধু আছে কিন্তু
রাত জেগে কারো সাথে কথা বলিনা।
আমার ছবিটা দেখার আগে পর্যন্ত
আমার সবই তার ভালো লেগেছিল।
বুঝলাম এখানেও আমার কালো রংটা
আমার আত্মবিশ্বাস, রোমান্টিকতা,
আমার ম্যাচিউরিটি
সব কিছুকে ছাপিয়ে গেছে!
Leave a Reply