মোঃ আলমগীর হোসেন চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রতিনিধি।
চুয়াডাঙ্গা জেলার সুযোগ্য পুলিশ সুপার জনাব মোঃ জাহিদুল ইসলাম মহোদয় বৃহস্পতিবার ০৫ আগস্ট ২০২১ খ্রিঃ তারিখ সকাল ০৮:০০ ঘটিকার সময় জেলা পুলিশ চুয়াডাঙ্গা’র পক্ষ থেকে দামুড়হুদা থানাধীন ৮ শহীদের গণকবর স্মৃতিসৌধে ফুলেল শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পন করেন।
১৯৭১ সালের ৫ আগস্ট এই দিনটা চুয়াডাঙ্গা জেলার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে মর্মান্তিক ও স্মরণীয় একটি দিন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে এই দিনে জেলার ৮ জন মুক্তিযোদ্ধা সম্মুখ সমরে শহীদ হন। তারা হলেন-হাসান জামান, সাইফুদ্দিন তারেক, রওশন আলম, আলাউল ইসলাম খোকন, আবুল কাশেম, রবিউল ইসলাম, কিয়ামুদ্দিন ও আফাজ উদ্দীন।
১৯৭১ সলের ৩ আগস্ট বীর মুক্তিযোদ্ধা গেরিলা গ্রুপ কমান্ডার হাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে একদল বীর মুক্তিযোদ্ধা দামুড়হুদা উপজেলার সীমান্তবর্তী গ্রাম জগন্নাথপুর গ্রামের শেল্টার ক্যাম্পে অবস্থান করছিলেন। ৪ আগস্ট মুক্তিযোদ্ধারা পাশের বাগোয়ান গ্রামের মুসলিম লীগের দালাল কুবাদ খাঁকে ধরে নিয়ে আসে। মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি হানাদারদের উপর আক্রমণ করার পরিকল্পনা করছিল।
৫ আগস্ট সকালে পাকিস্তানি দালাল কুবাদ খাঁর দু’জন লোক মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে গিয়ে খবর দেয়, রাজাকাররা তাদের ধান কেটে নিয়ে যাচ্ছে। এ খবর শুনে মুক্তিযোদ্ধা হাসান জামানের নেতৃত্বে একদল মুক্তিযোদ্ধা রাজাকারদের শায়েস্তা করার জন্য অস্ত্র নিয়ে আনুমানিক ২ কিলোমিটার দূরে বাগোয়ান গ্রামের মাঠে দুই দলে বিভক্ত হয়ে অগ্রসর হতে থাকে। মুক্তিযোদ্ধাদের রেকি দল ফিরে যাওয়ার সাথে সাথে নাটুদহ ক্যাম্পের পাকিস্তানি সেনারা পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী মাঠের আখ ক্ষেতে ‘ইউ’কাটিং অ্যাম্বুশ করে।
মুক্তিযোদ্ধারা কিছু বুঝে ওঠার আগেই তাদের অ্যাম্বুশে পড়ে যায়। এখানে পাকিস্তানি হানাদারদের সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রায় আড়াই ঘণ্টা যুদ্ধ হয়। পাকিস্তানি হানাদারদের কাছে থাকা আধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র মুক্তিযোদ্ধাদের উপর ব্যবহার করতে থাকে। অবস্থা বেগতিক দেখে মুক্তিযোদ্ধারা কৌশলে দুটি দলে বিভক্ত হয়ে শত্রম্নকে আক্রমণ করতে থাকে। এ অবস্থায় যে কোনো একজনকে কাভারিং ফায়ার দিয়ে নিজ দলকে বাঁচাতে হয়। বীর মুক্তিযোদ্ধা হাসান জামান স্বাভাবিক ফায়ারের দায়িত্ব নিয়ে শহীদ হন। পিছু হটার সময় তারা অন্য সাথীদের বাঁচাতে পারলেও শহীদ হন ৮ বীর মুক্তি সেনা। পাকিস্তানি হানাদাররা তাদেরকে ঘিরে ফেলে খুব কাছ থেকে গুলি করে হত্যা করে। এই সম্মুখযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদারদের অনেক সদস্য মারা যায় এবং আহত হয়। পরে জগন্নাথপুর গ্রামের মানুষ রাস্তার পাশে দু’টি কবরে চারজন করে আটজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার লাশ কবর দেয়। কালক্রমে এই আটজন মুক্তিযোদ্ধার কবরকে ঘিরেই এ স্থানটির নামকরণ হয়েছে “আটকবর”।
মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলাইমান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুনের প্রচেষ্টায় ১৯৯৮ সালে এলজিইডি’র তৎকালীন প্রধান প্রকৌশলী কামরুল ইসলাম সিদ্দিকীর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে ওই গণকবরের উপর স্মৃতিসৌধ গড়ে তোলা হয়। নাম দেওয়া হয় ‘আটকবর’।
উক্ত অনুষ্ঠানে আরোও উপস্থিত ছিলেন ৮ শহীদ স্মৃতি কমপ্লেক্স এর প্রতিষ্ঠাতা চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা জনাব সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার সেলুন, চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য জনাব হাজী আলী আজগর টগর, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(প্রশাসন) জনাব আবু তারেক, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(সদর) জনাব কনক কুমার দাস, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(সদর সার্কেল) জনাব জাহাঙ্গীর আলম, দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার জনাব দিলারা রহমান, শিক্ষানবীশ সহকারি পুলিশ সুপার জনাব সাজিদ হোসেন, জনাব আব্দুল খালেক, অফিসার ইনচার্জ, দামুড়হুদা থানা, জনাব মাহাব্বুর রহমান, অফিসার ইনচার্জ, দর্শনা থানা সহ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
Leave a Reply