এম এ রশীদ বিশেষ প্রতিনিধিঃঃ
এসএমপি’র নতুন ৩ থানা গঠনের উদ্যোগ
নতুন করে আরও ৩টি থানা গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে সিলেট মহানগর পুলিশ (এসএমপি)। থানাসমূহ হচ্ছে- গাজী বুরহান উদ্দিন (রহ.) থানা, শাহী ঈদগাহ থানা ও জালালপুর থানা। বর্তমানে সিলেট মহানগর পুলিশের থানা রয়েছে ৬টি।
নগর পুলিশের কমিশনার মো. নিশারুল আরিফ জানিয়েছেন, নগরে জনসংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি অপরাধও বাড়ছে। অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ও জনসাধারণের জানমালের নিরাপত্তা দেয়াই পুলিশের কাজ। এজন্যে পুলিশি সেবা জনসাধারণের দোরগোড়ায় নিয়ে যেতে নতুন ৩টি থানা গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
তিনি জানান, আম্বরখানা- শাহী ঈদগাহ এলাকার লোকজনকে এয়ারপোর্ট থানায় যেতে হয়। তেমনি শাহজালাল উপশহরের বাসিন্দাদেরকে যেতে হয় শাহপরান (রহ.) থানায়। একই ভাবে জালালপুর এলাকার লোকজনকেও হয় মোগলাবাজার থানায় নতুবা দক্ষিণসুরমা থানায় যেতে হচ্ছে। থানার দূরত্ব থাকায় কোনো ঘটনা ঘটলে এসব এলাকায় পুলিশ যেতে সঙ্গত কারণেই কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। থানাগুলো গঠন করা হলে কোনো ঘটনা সংঘটনের পর তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ ঘটনাস্থলে ছুটে যেতে পারবে। জনসাধারণ কম সময়ে আরও কাছে পুলিশের সেবা পাবেন। এর ফলে অপরাধ নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি জনসাধারণকেও পুলিশ আরও ভালো সেবাও দিতে পারবে।
জানা গেছে, কোতোয়ালি থানা এবং শাহপরান (রহ.) থানার অংশবিশেষ নিয়ে গাজী বুরহান উদ্দিন থানা, কোতোয়ালি থানা, এয়ারপোর্ট থানা এবং জালালাবাদ থানার অংশবিশেষ নিয়ে শাহী ঈদগাহ থানা এবং দক্ষিণ সুরমা থানা ও মোগলাবাজার থানার অংশবিশেষ নিয়ে জালালপুর থানা গঠনের জন্য প্রস্তাব করেছে সিলেট মহানগর পুলিশ (এসএমপি)। ইতোমধ্যে এই প্রস্তাবনাটি সিলেটের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে বিভাগীয় কমিশনার ও সর্বশেষ সিলেটের ডিআইজি কার্যালয় হয়ে প্রস্তাবনাটি পাঠানো হবে পুলিশ সদর দপ্তরে। পুলিশ সদর দপ্তর যাচাই-বাছাই করার পর প্রস্তাবনাটি প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস সংক্রান্ত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটিতে ( নিকার) পাঠানো হবে। নিকারের সভায় অনুমোদনের পরই আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে এসএমপি’র নতুন ৩ থানার কার্যক্রম। এসএমপি’তে নতুন থানা গঠনের ব্যাপারে বেশ কিছুদিন ধরে আলাপ আলোচনা চলে আসছিল। বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এসএমপি’তে আরও নতুন থানা গঠনের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে বিভিন্ন সভায় উত্থাপিতও হয়েছে।
২০০৬ সালের ১৫ অক্টোবর কোতোয়ালি ও দক্ষিণসুরমা থানা, বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ি, কদমতলী পুলিশ ফাঁড়ি, সোবহানিঘাট পুলিশ ফাঁড়ি, লামাবাজার পুলিশ ফাঁড়ি ও আম্বরখানা পুলিশ ফাঁড়ি নিয়ে গঠন করা হয় সিলেট মহানগর পুলিশ (এসএমপি)। ২৬ অক্টোবর তৎকালীন অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী এম. সাইফুর রহমান আনুষ্ঠানিকভাবে এসএমপি’র কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। দেশের ৮টি মহানগর পুলিশের আয়তনের মধ্যে সিলেট মহানগর পুলিশের আয়তন সর্বোচ্চ। এসএমপি’র মোট আয়তন ৫১৮ দশমিক ৪৩ বর্গকিলোমিটার। সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ২৭টি ওয়ার্ড, সিলেট সদর উপজেলা ও দক্ষিণ সুরমা উপজেলার ১৭টি ইউনিয়ন এবং ২১৫টি মৌজার সমন্বয়ে গঠন করা হয় সিলেট মহানগর পুলিশ। প্রতিষ্ঠাকালে নগর পুলিশ এলাকার মোট জনসংখ্যা ছিল প্রায় ১৮ লাখ। এসএমপি প্রতিষ্ঠার ১৫ বছর ইতোমধ্যে পূর্ণ হয়েছে। বেড়েছে জনসংখ্যাও।
২ থানা ও পুরনো ৫টি ফাঁড়ি দিয়ে প্রায় ৫ বছর কার্যক্রম চলার পর ২০১১ সালের ১৪ মার্চ নিকারের সভায় কোন কোন থানা কোন কোন মৌজা ও ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত হবে তা নির্ধারন করে দেয়া হয়। এরপর ১১ আগস্ট তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এমপি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এডভোকেট সাহারা খাতুন এমপি আনুষ্ঠানিকভাবে শাহপরান থানা, জালালাবাদ থানা, এয়ারপোর্ট থানা ও মোগলাবাজার থানার কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। এতে এসএমপি’র থানার সংখ্যা দাড়ায় ৬টিতে। পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে শাহজালাল রহ. তদন্ত কেন্দ্র, শাহপরান (রহ.) তদন্ত কেন্দ্র ও কামালবাজার তদন্ত কেন্দ্র নামের ৩টি পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র গঠন করা হয়। স্থাপন করা হয়েছে শিবেরবাজার পুলিশ ফাঁড়ি ও আলমপুর পুলিশ ফাঁড়ি নামের দুটি পুলিশ ফাঁড়িও। বর্তমানে এসএমপি’র মোট থানা ৬টি, ৩টি তদন্ত কেন্দ্র ও ৭টি পুলিশ ফাঁড়ি রয়েছে।
সিলেট মহানগর পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত উপ-কমিশনার বি এম আশরাফ উল্লাহ তাহের বলেন, আগের চেয়ে নগরে জনসংখ্যাও বেড়েছে। কিন্তু থানার সংখ্যা বাড়েনি। নতুন থানা গঠন করা হলে আইনশৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার পাশাপাশি জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দেয়া আরও সহজ হবে।
Leave a Reply