মুজিববর্ষে খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গায় গৃহহীন ও হতদরিদ্রের জন্য বরাদ্দ প্রধানমন্ত্রীর আশ্রায়ন প্রকল্পের গৃহ নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। সরকারি অর্থয়ানে নির্মিত হলেও হতদরিদ্রদের কাছ থেকে ঘরপ্রতি নেওয়া হয়েছে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা। উপজেলার গোমতি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক হোসেন লিটনের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ এনেছেন ভুক্তভোগীরা।
অভিযোগ রয়েছে ঘরের বরাদ্দ পেতে চেয়ারম্যানকে দিতে হয়েছে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা। টাকা দেওয়ার পরও নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে গৃহনির্মাণে। প্রতিটি ঘরে ৪৫ কেজি করে রড বরাদ্দ থাকলেও দেয়া হয়েছে জিআই তার! লোহার রড ছাড়াই নিম্নমানের ঘর বানিয়েছে চেয়ারম্যান। আশ্রয়ণ প্রকল্পের এমন অভিযোগে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
২০২০-২১ অর্থবছরে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর বরাদ্দ পায় গোমতি ইউনিয়নের শান্তিপুর এলাকার বাসিন্দা মালেকা বেগম। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ঘরের বরাদ্দ পাওয়ার জন্য আমার কাছে গোমতি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফারুক হোসেন লিটন ৫০ হাজার টাকার দাবি করেন। আমি ধারদেনা করে চেয়ারম্যানকে ২৫ হাজার টাকা দিয়েছি। এরপর আমাকে ঘর বরাদ্দ দেয়া হয়। রমজানের আগে থেকে ঘরের কাজ বন্ধ। এখনো ফ্লোর করা হয়নি, টয়লেট বসায়নি। ফ্লোর ছাড়াই ঘরের বসবাস করছি। আমি নিজে সিমেন্ট কিনে এনে দরজা জানালা লাগিয়েছি। ওরা কাজ শেষ করে চলে গেছে। এখন তারা বলছে আর কাজ করবে না। বাকি কাজ আমাদের করতে হবে।
শান্তিপুর এলাকার ফুলমিয়ার স্ত্রী সেলিনা বলেন, ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রকল্পের ঘর বরাদ্দ পায়। তবে ঘরের বরাদ্দ পেতে তারা চেয়ারম্যানকে দিয়েছে ২০ হাজার টাকা।
তিনি আরও বলেন, ঘরের বরাদ্দ পাওয়ার জন্য চেয়ারম্যান আমাদের কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা দাবি করেন। পরে গরু বিক্রি করে আমরা চেয়ারম্যানকে ২০ হাজার টাকা দিয়েছি। অথচ আমার ঘরটা দেখেন! কোথাও লোহার রড ব্যবহার করেনি। কেবলমাত্র জিআই তার দিয়েছে। সাত বস্তা বালুর সঙ্গে এক বস্তা সিমেন্ট দিয়েছে। মিস্ত্রীরা বালু বেশি দিয়েছে। মিস্ত্রীদের লোহার রড দিতে বললে তারা এ বিষয়ে চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলতে বলেন। এখন আমার ঘরের কাজ বন্ধ। এখনো ঘরে টিনের ছাউনি দেয়া হয়নি।
গোমতি বাজার এলাকার বাসিন্দা আজমেহের জানান, ঘরের কাজ এখনো শেষ হয়নি। পিলার ভেঙে পড়ে গেছে। ঘরের ভিতর কোনো রড দেয়নি। ঘরের কাজ বন্ধ এখন প্রায় ৩ মাস।
এছাড়া গৃহহীনদের ঘর বরাদ্দের তালিকায় নাম থাকার পরও চেয়ারম্যানের দাবি অনুযায়ি ৫০ হাজার টাকা দিতে না পারায় ঘর পায়নি দিনমজুর আবু তাহের। এ নিয়ে জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা।
আবু তাহের বলেন, ঘর বরাদ্দের উপকারভোগীর তালিকায় আমার নাম ছিল এক নাম্বারে। চেয়ারম্যান আমাকে ৫০ হাজার টাকা দিতে বলেন। আমি টাকা দিতে না পারায় আমার নামের বরাদ্দকৃত ঘর ইসমাইল হোসেন নামে এক প্রভাবশালীকে বরাদ্দ দিয়েছেন চেয়ারম্যান।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগের ভিডিও এ প্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে।
গোমতি ইউনিয়ন পরিষদের ৭নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য জয়নাল আবেদিন বলেন, গোমতি ইউপি এলাকায় প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে হতদরিদ্ররা ৩৫টি ঘর পেয়েছেন। এর মধ্যে একটি ঘরও নিয়ম মেনে নির্মাণ করা হচ্ছে না। সবগুলোতে অনিয়ম করা হয়েছে। প্রতিটি ঘরে ভুক্তভোগীরা ২০ থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত চেয়ারম্যানকে দিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরে অনিয়ম তদন্ত করে দোষীদের বিচার দাবি করেছেন মাটিরাঙ্গা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল আলম।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে গোমতি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক হোসেন লিটন জানান, আমি টাকা নেই নাই, আর টাকা নিতে যাব কেন, প্রধানমন্ত্রীর ঘর। ঘরের কাজ ভালো করার জন্য যা যা করার দরকার করেছি।
ঘরে জিআই তার ব্যবহার প্রসঙ্গে চেয়ারম্যান বলেন, তার দিয়ে ছাউনির কাঠ বাঁধা হবে। পিলারে কোনো রড বরাদ্দ না থাকায় তার দিয়েছি। রড বরাদ্দ নাই, ঘর শুধু ইটের উপর থাকবে।
মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. হেদায়েত উল্ল্যাহ জানান, আমি এখানে ৩ দিন আগে দায়িত্ব নিয়েছি। ইতোমধ্যে বেশকিছু অনিয়মের অভিযোগের ব্যাপারে শুনেছি। এখনো কিছু ঘরের কাজ চলমান আছে। আমরা তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা নেব।
আবদুল জলিল
খাগড়াছড়ি
০১৬০৯৪২০০০৭
Leave a Reply