১৫ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ।১লা চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।শনিবার

আমাকেও গুম করে দিন,কাঁদতে কাঁদতে কথাগুলো বলছিলেন ২০১৩ সালে ‘গুম’ হওয়া সাজেদুল ইসলাম সুমনের মেয়ে আফসানা ইসলাম রাইদা।

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

  1. ♦জসিম মাহমুদ♦

    কতদিন হলো বাবাকে দেখি না। বাবার আদর পাই না। বাবাকে দেখতে খুব মন চায়। আমার বাবাকে ফিরিয়ে দিন। আমি বাবার সঙ্গে স্কুলে যেতে চাই। বাবার সঙ্গে খেলতে চাই। বাবা ছাড়া আমার কিছু ভালো লাগে না। আমি খুব অসহায়। কাঁদতে কাঁদতে কথাগুলো বলছিলেন ২০১৩ সালে ‘গুম’ হওয়া সাজেদুল ইসলাম সুমনের মেয়ে আফসানা ইসলাম রাইদা।

    মাইকে যখন রাইদা তার বাবাকে ফিরে পাওয়ার করুন আকুতি জানাচ্ছিলেন তখন তার দু’চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছিল। তার সেই কান্নায় যেন ভিজে যাচ্ছিল সভায় উপস্থিত সকলের হৃদয়। এ সময় কারো কারো গাল বেয়ে নোনা জল পড়তে দেখা যায়।
    গতকাল ৪ ডিসেম্বর মঙ্গলবার ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘গুম হওয়ার পাঁচ বছর শেষ, আর অপেক্ষা কতদিন’ শীর্ষক এক আলোচনা সভার আয়োজন করে ‘মায়ের ডাক’ নামের একটি সংগঠন। এতে গুম হওয়াদের স্বজনরা বক্তব্য তুলে ধরেন। মনে জমানো কষ্টের কথাগুলো বলেন তারা। কি হবে আর কি পাবেন সব ভূলে দীর্ঘ দিনের জমানো কষ্ট ভাগাভাগি করেছেন অসহায় মানুষগুলো। সে এক অন্যরকম পরিবেশ। উপস্থিত না থেকে এ ধরনের পরিবেশ অনভূব করা বড়ই কঠিন।
    উচ্চ স্বরে কাঁদতে কাঁদতে রাইদা বলছিলেন, আমি আমার বাবাকে দেখতে চাই। আমার বাবা কোথায়? আমার বাবা কেমন আছে, আমি কিছু জানি না। আমার বাবাকে ফিরিয়ে দিন। আমাকে আমার পরিবার বলে সাবধানে চলতে। আমি সাবধানে চলে কী করব। আমাকে নিয়ে যাবে, আমাকে নিয়ে যেতে দিন, গুম করে দিন। তাহলে আমি আমার বাবাকে দেখতে পারব। আমি কেমন সন্তান যে, আমার বাবাকে পাঁচ বছর ধরে দেখতে পাই না। রাইদার করুন আর্তনাত এ সময় পুরো পরিবেশটাই শোকাহত হয়ে উঠে। অনেককেই চোখ মুছতে দেখা যায়।
    ২০১৩ সালে গুম হওয়াদের স্বজনদের নিয়ে এ আলোচনা সভায় লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন নিখোঁজ সুমনের বড় বোন মারুফা ইসলাম ফেরদৌসী। তিনি বলেন, প্রতিবছর আমরা আপনাদের কাছে ছুটে আসি এবং আপনাদের মাধ্যমে দেশবাসী জানতে পারে আমরা আমাদের স্বজনদের হারিয়ে কত কষ্টে জীবনযাপন করছি। দেখতে দেখতে পাঁচটি বছর শেষ হয়ে গেছে। সামনে চলে এলো একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনে বর্তমান সব রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করছে। আমাদের ‘মায়ের ডাকের’ পক্ষ থেকে সব রাজনৈতিক দলের প্রতি একটি দাবি, তাহলো দলীয় ইশতেহারে গুম হওয়ার বিষয়ে প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দলের স্পষ্ট বক্তব্য থাকতে হবে।
    মারুফা ইসলাম ফেরদৌসী আরো বলেন, গত পাঁচ বছরে গুম হওয়া কেউ ফিরে আসেনি। কিন্তু গুম হওয়া পরিবারের অনেকেই কাঁদতে কাঁদতে না ফেরার দেশে চলে গেছেন। মুন্নুর বাবা এই প্রেস ক্লাবে এসে সন্তানের ফিরে আসার দাবি জানিয়েছিলেন, এখন তিনি চিরদিনের জন্য আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। পারভেজ হোসেনের বাবা ও শ্বশুর না ফেরার দেশে চলে গেছেন। তার মেয়ে হৃদি এখন কাউকে দাদু-নানু ডাকতে পারে না। সাইফুর রহমান সজীবের মা রেনু মারা গেছেন। ঝন্টুর বাবাও মৃত্যুবরণ করেছেন।
    গত বছর ‘মায়ের ডাক’ আয়োজিত এমনই এক আলোচনা সভায় যুবদল নেতা পারভেজ হোসেনের চার বছর বয়সী মেয়ে হৃদি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বক্তব্য দিয়ে হৃদয়বিদায়ক পরিবেশ সৃষ্টি করেছিল। এবারের আলোচনাতেও কথা বলেছে হৃদি। তবে ‘বাবা’, ‘বাবা’ আর কান্না ছাড়া এবার তার মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হয়নি।
    গুম হওয়া মারুফের বোন রত্মা বলেন, পাঁচ বছর হয়ে গেলে আমার ভাইকে দেখতে পাই না। সে কোথায় আছে, কেমন আছে, আমরা কিছুই জানি না। আমাদের কোনোকিছু চাওয়ার নেই, শুধু আমার ভাইকে ফেরত চাই।
    অপর গুম হওয়া আব্দুল কাদের মিয়া মাসুমের মা আয়শা আলী বলেন, আমি আমার ছেলেকে সব জায়গাই খুঁজে বেড়াই। কিন্তু কোথাও পাই না। আজ কতদিন হয়ে গেল মা ডাক শুনতে পাই না। আমার একটাই সন্তান। পাঁচ বছর ধরে সরকারের কাছে একটাই দাবি জানাচ্ছি, আমার সন্তানকে ফিরিয়ে দিন। প্রধানমন্ত্রীও তো স্বজনহারা। তিনি কি স্বজন হারানোর ব্যথা বুঝেন না? আমি চাই আগামী ভোটের আগেই আমার সন্তানকে আমার কোলে ফিরিয়ে দিন।
    নিখোঁজ (গুম হওয়া) এরশাদ আলীর পিতা হাজী মাহবুব আলী কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমি কী নিয়ে বাঁচব। আল্লাহ তুমি আমারে কী করলা। এরশাদ আলী তিনটি মেয়ে ও বউ রেখে গেছে। এদেরকে আমি কীভাবে লালন-পালন করব। আমি কি আর কখনও এরশাদ আলীকে ফিরে পাব না? এরশাদ আলী ঢাকার বংশাল থানা এলাকায় বসবাস করতো। ২০১৭ সালের ২৮ ডিসেম্বর থেকে সে নিখোঁজ রয়েছে। তিনি আরও বলেন, এরশাদ আলী বিএনপির কর্মী ছিলেন। এটাই কি তার অপরাধ? আলোচনা সভার আয়োজকদের পক্ষ থেকে গুমের বিষয়ে কিছু বলার জন্য ডাকা হয় মারুফ জামানের মেয়ে সামিয়া জামানকে। বাবাকে খুঁজে না পাওয়া এই তরুণী মাইক হাতে নিয়ে বলেন, আমার কিছু বলার নেই। পাঁচ বছর আগে গুমের শিকার হওয়া সুমনের মা হাজেরা বেগমের সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন-নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল, বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, বিএনপি নেতা তাবিথ আউয়াল, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের ফয়জুল হাকিম লালা, মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন অধিকারের পরিচালক নাসির উদ্দিন এলএম প্রমুখ।

এই পোস্টটি আপনার সামাজিক মিডিয়াতে সেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রনজিৎ বর্মন শ্যামনগর(সাতক্ষীরা)প্রতিনিধি ঃ

সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলায় নীলাকাশ টুডের সম্পাদক মোঃ নুরুজ্জামানের সড়ক দূর্ঘটনায় মর্মান্তিকভাবে মৃত্যু হয়েছে।

শুক্রবার (২৬ জুলাই) রাত সাড়ে দশটায় শ্যামনগর উপজেলা সদরের নিকবর্তী গোপালপুর সড়কে কুলখালী নামক স্থানে দূর্ঘটনাটি ঘটে।

নিহতের পরিবার ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায় রাত সাড়ে দশটায় নিজ বাইসাইকেল যোগে নিজ বাড়ী উপজেলার নুরনগর ইউপির নুরনগর গ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা হন। এ সময় গোপালপুর মুক্তিযোদ্ধা সড়কে কুলখালী নামকস্থানে নির্মানাধীন বক্স কালভার্টের গর্তে সাইকেল সহ পড়ে যান। নির্মানাধীন বক্স কালভার্টের বাহিরে বের হওয়া লোহার রড তার মাথায় ছিদ্র হয়ে ঢুকে যেয়ে এক পাশ থেকে অপরপাশে বের হয়ে যায় পর স্থানীয়রা শ্যামনগর উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাঃ আনিছুর রহমান মৃত বলে ঘোষণা করেন।

শ্যামনগর প্রেসকাবের সাবেক সভাপতি আকবর কবীর বলেন কিছুদিন পূর্বে এই বক্স কালভার্ট তৈরী করতে যেয়ে একই সড়কে মোমিন মল্লিক নামে এক শ্রমিক মারা যান। তিনি আরও বলেন  নির্মানাধীন বক্স কালভার্টের  ঠিকাদার হিসাবে কাজ করছেন এস এম আবুল বাসার।

নীলাকাশ টুডের সম্পাদক মোঃ নুরুজ্জামানের মৃত্যুতে গভীর ভাবে শোক প্রকাশ করেছেন সাতক্ষীরা-৪ আসনের এমপি এস এম আতাউল হক দোলন, শ্যামনগর উপজেলা প্রেসকাবের আহবায়ক শেখ আফজালুর রহমান সহ সকল সাংবাদিকবৃন্দ, সুন্দরবন প্রেসকাবের সাংবাদিকবৃন্দ প্রমুখ।

ছবি- নিহত নীলাকাশ টুডের সম্পাদক মোঃ নুরুজ্জামান।

রনজিৎ বর্মন
তাং-২৭.৭.২৪

নীলাকাশ টুডের সম্পাদক নুরুজ্জামান সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত।