এম এ রশীদ বিশেষ প্রতিনিধিঃ
বাউলা কে বানাইলো রে❓
হাসন রাজা রে বাউলা
কে বানাইলো রে❓’ …. এরকম অসংখ্য জনপ্রিয় গানের স্রষ্টা হাছন রাজা।
প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকা সত্ত্বেও মরমী সাধনা দর্শনচেতনার সাথে তিনি সঙ্গীতের এক অসামান্য সংযোগ ঘটিয়েছেন। আঞ্চলিক ভাষায় সহজ-সরল সুরে রচনা করেছেন হাজারো আধ্যাত্মিক গান। আজ এই মহান শিল্পীর ৯৯তম মৃত্যুদিবস। আজকের এই দিনে বিএনএস পরিবার তাঁকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছে।হাছন রাজার প্রকৃত নাম অহিদুর রেজা বা দেওয়ান হাসন রাজা চৌধুরী। তিনি একজন মরমী কবি, সাধক ও বাউল শিল্পী। ১৮৫৪ সালের ২১ ডিসেম্বর সিলেটের সুনামগঞ্জের তেঘরিয়া গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা দেওয়ান আলী রাজা চৌধুরী ছিলেন একজন প্রতাপশালী জমিদার। মা হুরমত জাহান বিবি। তাঁর পিতা-মাতা দু’জনেরই পুর্বপুরুষ ছিলো অযোধ্যাবাসী ও হিন্দু ধর্মের অনুসারী। কয়েক পুরুষ আগেই তারা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে চলে আসেন সুনামগঞ্জে এবং সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন।
বাল্যকালে কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণ করে নি হাসন রাজা। বাবার মৃত্যুর কারণে পনেরো বছর বয়সেই পরিবার ও জমিদারির দায়িত্ব নিতে হয় তাঁকে। যুবক বয়সে সৌখিন ও ভোগবিলাসী জীবন-যাপন করলেও পরিণত বয়সে এসব ছেড়ে লালনের মত ফকিরি জীবন বেছে নেন।
আধ্যাত্মিকতা, স্রষ্টা, ক্ষণস্থায়ী জীবন ও নিজ কৃতকর্মের অপরাধবোধকে উপজীব্য করে হাসন রাজা রচনা করেন অসংখ্য গান। সেই গানের মাঝে নিজেকে ‘বাউলা’, ‘উদাসী’, ‘দেওয়ানা’ কিংবা ‘পাগলা হাসন রাজা’ বলে সম্মোধন করেন।
হাসন রাজার গানের প্রকৃত সংখ্যা আজও জানা সম্ভব হয় নি। তাঁর রচিত ২০৬টি গান নিয়ে ১৯০৭ সালে ‘হাছন উদাস’ নামে একটি সংকলন প্রকাশিত হয়। এছাড়া ‘হাছন রাজার তিনপুরুষ’, ‘আল ইসলাহ্’সহ বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে হাসন রাজার অসংখ্য গান।
‘লোকে বলে বলে রে’, ‘আমি না লইলাম আল্লাজির নাম রে’, ‘হাছন রাজায় কয়’, ‘আঁখি মুঞ্জিয়া দেখ রূপ রে’, ‘প্রেমের বান্ধন বান্ধরে দিলের জিঞ্জির দিয়া’, ‘রঙের বাড়ই রঙের বাড়ই রে’, ‘মাটির পিঞ্জিরার মাঝে বন্দি হইয়ারে কান্দে হাছন রাজা মন মনিয়া রে’, ‘গুড্ডি উড়াইল মোরে, মৌলার হাতের ডুরি’, ‘একদিন তোর হইবো রে মরণ’সহ অগণিত শ্রোতাপ্রিয় ও কালজয়ী গান রচনা করেছেন হাসন রাজা।
১৯২২ সালের ৬ ডিসেম্বর ইহলোক ত্যাগ করে পরপারে পাড়ি জমান এই কিংবদন্তি সাধক।
Leave a Reply