৩০শে অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ।১৪ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।বুধবার

আজ আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস সুন্দরবন অঞ্চলের মুন্ডা সম্প্রদায়ের নিয়ে গবেষণা প্রয়োজন।

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

রনজিৎ বর্মন শ্যামনগর(সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি ঃ

আজ ৯ আগষ্ট আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস। বিশে^র অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও দিবসটি যথাযথ মর্যাদায় পালিত পালিত হচ্ছে। এই দিনে আদিবাসী সংগঠন গুলি ও আদিবাসীরা একত্রিত হয়ে তাদের বিভিন্ন দাবী নামা পেশ পেশ করে থাকেন অধিকার আদায়ে।

 

দিবসটি উদ্যাপনের মূল লক্ষ্য হল আদিবাসীদের জীবনধারা,মৌলিক অধিকার, মানবাধিকার, আদিবাসীদের ভাষা সংস্কৃতি, শিক্ষা প্রভূতি সম্পর্কে সবাইকে অবহিতকরা বা সচেতন করে তোলা।

 

দিবসটি উপলক্ষে সাতক্ষীরার সুন্দরবন উপকূলের আদিবাসী মুন্ডা সংস্থা সামস এক কর্মসূচীর আয়োজন করেছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে আলোচনাসভা, যুবআদিবাসীদের নিয়ে কর্মপরিকল্পনা প্রভূতি।

 

উপকূলের আদিবাসীরা কেমন আছেন এ বিষয়ে সুন্দরবন আদিবাসী মুন্ডা সংস্থার নির্বাহী পরিচালক কৃষ্ণ পদ মুন্ডা জনায় সুন্দরবন উপকূলে মুন্ডা, মাহাতো, রাজবংশী, বাগদি, বুনো, উঁরাও সম্প্রদায় বাস করে। যাদের কথা অনেকেই ভূলে গেছে। বাংলাদেশে বসবাসরত আদিবাসীদের দুইটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এক পার্বত্য অঞ্চল বা পাহাড়ী অঞ্চল আর অপরটি হল সমতল অঞ্চল। পার্বত্য অঞ্চল বা পাহাড়ী অঞ্চলের আদিবাসীদের কথা অনেকেই জানে। তবে সমতল অঞ্চলের রাজশাহী এবং দিনাজপুর এলাকার আদিবাসীদের কথা অনেকেই জানলেও সুন্দরবন এলাকার আদিবাসীদের কেহ খোঁজ রাখে না বলে দাবী জানায়। বাংলাদেশে বৃহত্তর রাজশাহী, নওগাঁ, দিনাজপুর, নাটোর, পাবনা, জয়পুরহাট, ময়মনসিংহ, সাভার, গাজীপুর, সিরাজগঞ্জ, ঠাকুরগাঁ, পঞ্চগড়, সিলেট, ঝিনাইদহ, ফরিদপুর, খুলনা,সাতক্ষীরা সহ অন্যান্য অঞ্চলে মুন্ডারা বাস করে। তারা যেখানে থাকুক আদিবাসী মুন্ডাদের স্বাতন্ত্র বৈশিষ্ট্য রয়েছে। তাদের আচার-আচরণ, ভাষা,সংস্কৃতি সামাজিক অবকাঠামো এখনও ভিন্ন রয়েছে বলে তাদেরকে বাঙ্গালী থেকে সহজেই পৃথক করা যায়।

 

কৃষ্ণ পদ মুন্ডা জানায় সুন্দরবন অঞ্চলের মুন্ডাদের নিয়ে খুব বেশী গবেষণা হয়নি। তাদের নিয়ে গবেষণা করাটা জররুী বলে মত প্রকাশ করে। সুন্দরবন অঞ্চলের মুন্ডাদের লিখিত কোন ধর্ম গ্রন্থ নেই। তারা প্রকৃতি পূজারী। তবে কারো কারো মতে মুন্ডাদের দেবতা হল বিরসা মুন্ডা। যিনি ১৮৭৫ সালে ভারতের রাঁচি শহরে জন্ম গ্রহণ করে। তারা পূর্ব পুরুষদের স্বরণ করে সকল পূজা করে।আদিবাসী মুন্ডাদের সুশীল সমাজের ব্যক্তিরা বুনো,কুলি বলে ডাকত যা এখনও প্রচলিত রয়েছে। নির্বাহী পরিচালক জনায়, মুন্ডা সম্প্রদায়ের সাথে এখনও বাঙ্গালীরা ভাল ভাবে মিশতে চায়না। মুন্ডারা শামুক, ইঁদুর, শুকর,কচ্ছপ,কঁকড়া,বনগাড়া,বেজি ইত্যাদি খায় বলে মুন্ডাদের সাথে হয়ত এ কারণে মিশতে চায় না। এমনকি বাঙ্গালী নারী পুরুষরা মুন্ডা ছেলে মেয়েদের সাথে তাদের ছেলে মেয়েদের মিশতে দিতে চায় না সহজে এ সকল খাওয়ার কারণে।

 

মুন্ডা শব্দটি নিয়ে জানতে চাইলে জানায় মুন্ডা শব্দের অর্থ নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য রয়েছে। বয়স্ক ব্যক্তিদের মতে মুন্ডা শব্দের অর্থ ’মুড়হা’ শব্দ থেকে এসেছে। এখানে মুন্ডা ভাষায় মুড়হা বলতে গাছের মূলকে বোঝানো হয়েছে। অনেকে বলেন মুড় থেকে মুন্ডা শব্দটি এসেছে। আবার অনেকের মতে মুড় অর্থ মাথা। মুন্ডাদের শারীরিক গঠন সম্পর্কে জানা যায় কালো রং, উচচতা মাঝারী, কালো বা কোঁকড়ানো চুল,ঠোঁট পুরু ,মাথার খুলি দীর্ঘ আকৃতির, নাক চেপ্টা। তবে গবেষকদের মতে মুন্ডাদের আকৃতি ভিন্নও থাকতে পারে বলে জানায়।

 

এ অঞ্চলে মুন্ডাদের বসবাস সম্পর্কে জানায় মুন্ডা সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রবীন ব্যাক্তি অশি^নী মুন্ডার (৭৬)মতে তাদের পিতা মহের পূর্ব পুরুষরা এখান থেকে আনুমানিক ২২০ কুড়ি বছর পূর্বে ভারতের ঝাড়খন্ড,উড়িষ্যা, বিহার, রাচি অঞ্চল থেকে সুন্দরবন অঞ্চলে এসেছে। তৎকালিন জমিদাররা সুন্দরবন অঞ্চল আবাদ করার জন্য ও লাঠিয়াল বাহিনী হিসাবে ব্যবহার করার জন্য তাদেরকে এ অঞ্চলে আনা হয় বলে দাবী করে। যার কারণে তারা সাহসী ও পরিশ্রমী। তাদের বাপ দাদারা গল্প করতেন সুন্দরবনের বাঘ, হরিণ বা হিং¯্র জন্তুর সাথে লড়াই করে অস্থিত্বকে টিকিয়ে রেখেছে। পূর্বে তাদের অনেক জমি বা সম্পত্তি ছিল। দিনে দিনে এগুলি হারিয়ে গেছে বিভিন্ন কারণে। মুন্ডাদের পোষাক ছিল সিমীত। পূর্বে তারা কোমরের নিচে ও বুকে একটু কাপড় জড়িয়ে রাখত। এখন এটি পরিবর্তন হয়েছে।

 

বর্তমান সময়ে সুন্দরবন অঞ্চলে মুন্ডাদের নানান সমস্যা রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। যেমন মুন্ডাদের জমি রক্ষা করার লড়াই, বিশুদ্ধ পানির সমস্যা, আর্থিক সংকট, লবনাক্ততার মধ্যে সবজি চাষ, দূর থেকে পানি সংগ্রহ করা, কর্মক্ষেত্র কমে যাওয়া, ভাষা ও সংস্কৃতি টিকিয়ে রাখার লড়াই সহ অন্যান্য সংগ্রাম করতে হচ্ছে বলে জানায়।

 

মুন্ডাদের এহেন অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য মুন্ডাদের অর্থনৈতিক উন্নতি , সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি,শিক্ষার হার বৃদ্ধি, ভাষা ও সংস্কৃতি টিকিয়ে রাখতে গবেষণা কেন্দ্র বা চর্চাকেন্দ্র সৃষ্টি করা প্রয়োজন বলে জানায়। মুন্ডাদের সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধিতে, বা অর্থনৈতিক উন্নয়নে তথা সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখতে সকলকে এগিয়ে আসার আহব্বান জানান সামসের নির্বাহী পরিচালক কৃষ্ণ পদ মুন্ডা।

 

ছবি- সুন্দরবন উপূলীয় শ্যামনগরে মুন্ডা সম্প্রদায়ের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের একটি চিত্র।

এই পোস্টটি আপনার সামাজিক মিডিয়াতে সেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রনজিৎ বর্মন শ্যামনগর(সাতক্ষীরা)প্রতিনিধি ঃ

সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলায় নীলাকাশ টুডের সম্পাদক মোঃ নুরুজ্জামানের সড়ক দূর্ঘটনায় মর্মান্তিকভাবে মৃত্যু হয়েছে।

শুক্রবার (২৬ জুলাই) রাত সাড়ে দশটায় শ্যামনগর উপজেলা সদরের নিকবর্তী গোপালপুর সড়কে কুলখালী নামক স্থানে দূর্ঘটনাটি ঘটে।

নিহতের পরিবার ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায় রাত সাড়ে দশটায় নিজ বাইসাইকেল যোগে নিজ বাড়ী উপজেলার নুরনগর ইউপির নুরনগর গ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা হন। এ সময় গোপালপুর মুক্তিযোদ্ধা সড়কে কুলখালী নামকস্থানে নির্মানাধীন বক্স কালভার্টের গর্তে সাইকেল সহ পড়ে যান। নির্মানাধীন বক্স কালভার্টের বাহিরে বের হওয়া লোহার রড তার মাথায় ছিদ্র হয়ে ঢুকে যেয়ে এক পাশ থেকে অপরপাশে বের হয়ে যায় পর স্থানীয়রা শ্যামনগর উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাঃ আনিছুর রহমান মৃত বলে ঘোষণা করেন।

শ্যামনগর প্রেসকাবের সাবেক সভাপতি আকবর কবীর বলেন কিছুদিন পূর্বে এই বক্স কালভার্ট তৈরী করতে যেয়ে একই সড়কে মোমিন মল্লিক নামে এক শ্রমিক মারা যান। তিনি আরও বলেন  নির্মানাধীন বক্স কালভার্টের  ঠিকাদার হিসাবে কাজ করছেন এস এম আবুল বাসার।

নীলাকাশ টুডের সম্পাদক মোঃ নুরুজ্জামানের মৃত্যুতে গভীর ভাবে শোক প্রকাশ করেছেন সাতক্ষীরা-৪ আসনের এমপি এস এম আতাউল হক দোলন, শ্যামনগর উপজেলা প্রেসকাবের আহবায়ক শেখ আফজালুর রহমান সহ সকল সাংবাদিকবৃন্দ, সুন্দরবন প্রেসকাবের সাংবাদিকবৃন্দ প্রমুখ।

ছবি- নিহত নীলাকাশ টুডের সম্পাদক মোঃ নুরুজ্জামান।

রনজিৎ বর্মন
তাং-২৭.৭.২৪

নীলাকাশ টুডের সম্পাদক নুরুজ্জামান সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত।

অরবিন্দ কুমার মণ্ডল, কয়রা, খুলনাঃ

খুলনার কয়রায় জনপ্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে নিরাপদ খাদ্য বিষয়ক সচেতনতামূলক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে।
১৬ জুলাই মঙ্গলবার দুপুর ১২ টায় উপজেলা পরিষদের সম্মেলন কক্ষে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ খুলনা জেলার আয়োজনে ও কয়রা উপজেলা প্রশাসনের সহযোগীতায় এ সচেতনতামূলক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুলী বিশ্বাসের সভাপতিত্বে সচেতনতামূলক সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্হিত ছিলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান জি এম মোহসিন রেজা। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্হিত ছিলেন, উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নাসিমা আলম।
এসময় আরও উপস্হিত ছিলেন, কয়রা সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এস এম বাহারুল ইসলাম, উত্তর বেদকাশী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সরদার নুরুল ইসলাম কোম্পানি, দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আছের আলী মোড়ল, মহারাজপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আবদুল্লাহ আল মাহমুদ, মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহনেওয়াজ শিকারী, বাঙ্গালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুস সামাদ গাজী, আমাদী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান জুয়েল সহ সাতটি ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যবৃন্দ।

নিরাপদ খাদ্যের মূল প্রবন্ধ উপস্হাপন করেন খুলনা জেলা নিরাপদ খাদ্য অফিসার মোঃ মোকলেছুর রহমান।

কয়রায় নিরাপদ খাদ্য বিষয়ক সচেতনতামূলক সেমিনার অনুষ্ঠিত।